আমাদের প্রকাশনা

আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানের প্রতিবন্ধকতার বিকল্প সমাধান

(১৯৯৭ সালে মার্চ মাসে মাসিক শৈলী পত্রিকায় প্রকাশিত)

মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করে থাকে রোগবিষ বা এ্যান্টিজেন, এই রোগবিষকে সনাক্ত করে ধ্বংস করে থাকে রোগপ্রতিরোধ বাহিনী বা ইমিউন সিস্টেম –এ কাজটি সহজে করানোর জন্য প্রয়োজন রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর প্রশিক্ষনের–এই প্রশিক্ষনের নাম হচ্ছে উদ্দীপিতকরন বা ইমিউনোষ্টিমুলেশন — প্রশিক্ষনের জন্য ব্যবহৃত হয় উদ্দীপক বা এ্যাডজুভেন্ট — উদ্দীপক হচ্ছে দেহস্থ রোগবিষের অবিকল অনুরূপ প্রক্রিয়াজাত বিষাক্ত পদার্থ — এহেন একটি উদ্দীপকের উদাহরণ হচ্ছে টীকাতে ব্যবহৃত রোগ উত্পাদন ক্ষমতা বিহীন জীবাণুর মৃতপ্রায় দেহ। সংক্রামক ব্যাধির রোগবিষকে সনাক্ত করা গিয়েছে– তাই সংক্রামক ব্যাধির প্রতিকারের জন্য উদ্দীপক তৈরী করা সম্ভব হয়েছে– সংক্রামক নয় এমন অসংখ্য ব্যাধির রোগবিষকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি– তাই এদের উদ্দীপকও তৈরি করা যায়নি– ফলে এদের স্থায়ী আরোগ্যের পথ বন্ধ রয়ে গিয়েছে ।অতীতে বিজ্ঞান যখন এহেন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে তখন বিকল্প পন্থা অবলম্বন করে সেই বাধাকে অতিক্রম করে এসেছে–আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞান বিকল্প পথ খুঁজতে গিয়ে জিন থেরাপির মত জটিল পথ বেছে নিয়েছে– অথচ প্রাচীন ভেষজ চিকিত্সা পদ্ধতিতে রয়ে গিয়েছে একটি অতি সহজ উপায়– প্রাচীন চিকিত্সা পদ্ধতিগুলোকে আধুনিক ইমিউনোলজির জ্ঞানের আলোকে মূল্যায়ন করলে একটি সহজ এবং কম ব্যয়বহুল পথের সন্ধান পাওয়া যাবে– ঠিক যেমন ডায়ারিয়ার মতো একটি ব্যাপক রোগের সমাধান দিতে পেরেছে ওরস্যালাইন।


যে চিকিত্সা বিজ্ঞান মানব জাতিকে কলেরা, বসন্ত, হাম, যক্ষা ইত্যাদি ভয়াবহ কতিপয় সংক্রামক রোগের হাত থেকে মুক্ত থাকার জন্য টীকার মতো প্রায় ১০০% সফল একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে পেরেছে, সেই বিজ্ঞান সংক্রামক নয় এমন সকল রোগের বেলায় নিশ্চিত রোগ মুক্তির কোনো সফল উপায় নির্ধারণ করতে সক্ষম হচ্ছে না।টীকার দ্বারা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় এমন ধরনের সংক্রামক রোগের বেলায় এ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের দ্বারা রোগকে দমন করা সম্ভব হচ্ছে । তা না হলে ওরাল স্যালাইনের মত দেহের ক্ষতিপূরণ করে বিনা ঔষধে সংক্রামক ব্যাধির আক্রমণকে সামলানো যাচ্ছে।
অথচ বাত, মাথাব্যাথা, উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাষ্ট্রিক আলসার, ক্যান্সার ইত্যাদি অসংখ্য অসংক্রামক সকল রোগের বেলায় আধুনিক বিজ্ঞান স্থায়ী রোগমুক্তির কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। তাই অসংক্রামক সকল রোগের বেলায় দেহের রোগকে নির্মূল করা নয়, কেবলমাত্র রোগযন্ত্রণাকে কমিয়ে রেখে বেঁচে থাকাই হচ্ছে আধুনিক চিকিত্সার প্রচলিত পথ।
এভাবে ক্রমাগত রোগকষ্ট কমিয়ে রাখার ফলে দেহ মধ্যস্থ রোগের প্রক্রিয়া সমুহ বন্ধ হয় না । বরং রোগের তীব্রতা এবং প্রবণতা বাড়তেই থাকে । একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় যে, প্রতিটি মানুষের বেলায় শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত রোগের একটা ধারাবাহিক বৃদ্ধির প্রবণতা চলতে থাকে।
আপাতদৃষ্টিতে রোগের বহিঃপ্রকাশ ভিন্নতর হলেও মূলতঃ রোগের একটি ক্রমাবনতির প্রক্রিয়া প্রতিটি মানুষের বেলায় প্রায় একইভাবে চলতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ শৈশবে প্রকাশমান জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, মাথাব্যাথা, পেটের গোলমাল, চর্মরোগ ইত্যাদি রোগের তীব্রতা যৌবনে নানাবিধ যৌন রোগ এবং প্রৌঢ়ত্বে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবিটিস ইত্যাদি এবং বার্ধক্যে টিউমার, ক্যান্সার ইত্যাদি জটিল রোগের রূপধারণ করে আত্মপ্রকাশ করে থাকে । রোগপ্রবণতার বহিঃপ্রকাশের এমনি ধারাকে একেবারে বন্ধ করা না গেলেও দেহকে বিষমুক্ত রাখতে পারলে শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্য্যন্ত একটি নীরোগ শরীর উপহার দেওয়া সম্ভব ।এই কথাটা উপলব্ধি করতে না পারার কারণে চিকিত্সা বিজ্ঞানী তথা সাধারণ মানুষেরা কেবলমাত্র রোগকষ্ট থেকে মুক্ত থাকাকেই রোগমুক্ত হওয়ার সঠিক পথ বলে ভাবছেন। জ্বর, ব্যাথা,সর্দি, কাশি, পাতলা পায়খানা, চর্মরোগ ইত্যাদি রোগকষ্ট যে আসলে দেহের বিষমুক্ত হওয়ার কতিপয় প্রক্রিয়া মাত্র এই কথাটি প্রাচীনপন্থি চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা অণুমান করলেও প্রমাণের অভাবে নিশ্চিত করে বুঝাতে সক্ষম হননি। ইদানীং আবিষ্কৃত ডায়বিয়া রোগের চিকিত্সা পদ্ধতিতে ওরস্যালাইনের দ্বারা দেহের ক্ষয়পূরণ করে পাতলা পায়খানার মাধ্যমে ডায়রিয়ার ভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়ার পদ্ধতি প্রমাণ করেছে যে, অতীতের ব্যবহৃত এ্যান্টিবায়োটিক, ইমোটিল, ফ্ল্যাজিল ইত্যাদির মতো ঔষধ দ্বারা পাতলা পায়খানা বন্ধ করার চেষ্টা, দেহকে বিষমুক্ত হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করত । চিকিত্সা বিজ্ঞানের এই আবিষ্কার ডায়রিয়া রোগীর মৃত্তুর হার কমিয়ে দিয়েছে । দেহকে বিষমুক্তকরণ বা ডি-টক্সিফিকেশনের এই প্রক্রিয়াটি যে অন্যান্য প্রতিটি রোগের বেলায় প্রয়োজ্য, একথাটি আয়ূর্বেদ, ইউনানী এবং হোমিওপ্যাথির মত প্রাচীনপন্থি চিকিত্সা বিজ্ঞানীদের মত আধুনিক এ্যালোপ্যাথিক চিকিত্সা বিজ্ঞানীরাও যদি উপলব্ধি করতে পারতেন, তাহলে রোগবিষকে দেহের মাঝে আবদ্ধ রেখে কেবলমাত্র রোগকষ্টকে কমানোর দ্বারা দেহকে বিষের আধারে পরিণত করার ফলে যে সুস্থ দেহযন্ত্রসমুহ ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং রোগের তীব্রতা বেড়েই চলেছে, একথাটির প্রতি চিকিত্সা বিজ্ঞানীদের মনযোগ আকর্ষিত হত। শরীরকে রোগবিষ ধবংস করার ব্যাপারে সাহায্য না করে বরং শক্তিশালী ঔষধের সাহায্যে ক্রমাগত রোগবিষের সঙ্গে আপোষ করতে বাধ্য করার ফলে দেহের ভিতর যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে তারই নাম ইমিউনোকমপ্রোমাইজড অবস্থা । এর ফলে দেহের স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অকার্যকর হয়ে পড়ছে । সেই সুযোগে অধিকতর শক্তিশালী ভাইরাস নামক পরজীবীরা দেহে প্রবেশ করে সুস্থ দেহকোষের জীনগত পরিবর্তন করে জন্ম দিচ্ছে ক্যান্সারের মত কঠিন রোগ । আধুনিক চিকিত্সার এরূপ ব্যর্থতার সঠিক কারণ জানার জন্য নিঃসন্দেহে মানুষ ব্যাকুলতা অনুভব করে থাকে। কিন্তু বিষয়টি একটু জটিল হওয়ার কারণে এর বিশদ ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষের জ্ঞানের বাইরে রয়ে গিয়েছে। আমরা অতি সহজ ভাষায় বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করব। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানের অগ্রগতির পথের বাধাকে পরিস্কার করে তুলে ধরা এবং সেই বাধাকে অতিক্রম করার উদ্দেশ্যে প্রাচীন ভেষজ চিকিত্সা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত সহজ প্রক্রিয়াসমূহকে কাজে লাগানো। ঠিক যেমন ডায়রিয়ার মত একটি ব্যাপক সমস্যার সমাধান ওরাল স্যালাইনের মত একটি সহজলভ্য পদ্ধতির দ্বারা করা হয়েছে।এহেন জটিল বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ বিদ্যা বা ইমিউনোলজি সম্বন্ধে কিছু কথা জানতে হবে।

মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা : রোগপ্রতিরোধ বিদ্যা হচ্ছে আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানেরই একটি শাখা। এর অন্যতম অবদান হচ্ছে সংক্রামক ব্যাধির প্রতিরোধ করার জন্য টীকাদান পদ্ধতি। এই বিদ্যা এমন সব তথ্য আবিস্কার করেছে যা চিকিত্সা বিজ্ঞানের চিন্তাধারাকে আমূল পরিবর্তন করে ফেলেছে।
মানবদেহে রয়েছে অসংখ্য সূক্ষ্মকণা যাকে আমরা শ্বেতকণিকা বলে জানি। শ্বেতকণিকাকে সাহায্য করছে অন্য দুটি বাহিনী যাদের নাম অ্যান্টিবডি এবং কমপ্লিমেন্ট। এদের সবার কাজ হচ্ছে দেহের আভ্যন্তরীণ পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা। দেহের আভ্যন্তরীণ পরিবেশকে দূষিত করে ফেলে প্রধানত জীবাণু এবং ভাইরাস নামক অতিসূক্ষ্ম পরজীবী এবং এদের দ্বারা সৃষ্ট দূষিত পদার্থ যার নাম টকসিন। এই দূষণের ফলেই মূলত সৃষ্টি হয় প্রায় সকল প্রকারের সংক্রামক ব্যাধি।
মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর যে কোন বিজাতীয় পদার্থ যথা, জীবাণু এবং ভাইরাস এবং এদের দ্বারা সৃষ্ট বিষাক্ত পদার্থসমূহ ছাড়াও বহুবিধ বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে যা দেহে প্রবেশ করলেই মানুষকে অসুস্থ করে ফেলে। এ ধরনের ক্ষতিকর উপাদানসমূহকে আমরা এক কথায় রোগবিষ বা এ্যান্টিজেন্ট বলে আখ্যায়িত করব।দেহকে এই সকল দূষণ থেকে মুক্ত রাখতে পারলেই দেহ রোগমুক্ত থাকতে পারে। শ্বেতকণিকা এবং এদের সাহায্যকারীরা দেহকে দূষণ থেকে মুক্ত রেখে রোগমুক্ত রাখে বলেই এদেরকে বলা হয় রোগপ্রতিরোধ বাহিনী বা ইমিউন সিস্টেম।

সংক্রামক রোগের কারণ এবং তার প্রতিকার : উপরোক্ত জীবাণু এবং ভাইরাস নামক পরজীবীরা নিজেরা বেঁচে থাকার এবং বংশবিস্তার করার জন্য মানুষের দেহে প্রবেশ করে। কিন্তু এর ফলে মানুষের দেহের আভ্যন্তরীণ পরিবেশ দূষিত হয়ে যায় এবং সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। যে মানুষের দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনী সুস্থ এবং সবল , সে মানুষের দেহে কোন রকম পরজীবী প্রবেশ করতেই পারে না কিংবা প্রবেশ করলেও বেশী দিন টিকে থাকতে পারে না । রোগপ্রতিরোধ বাহিনী এদেরকে ধবংস করে ফেলে ।
এ সকল পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট রোগসমূহের মধ্যে কতিপয় রোগ হচ্ছে কলেরা, বসন্ত, হাম, যক্ষ্মা ইত্যাদি। এহেন সংক্রামক ব্যাধির জীবাণু এবং ভাইরাসকে বিজ্ঞানীরা অণূবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন বলে এদের প্রতিকারও সম্ভব হয়েছে। তিনটি উপায়ে এদের প্রতিকার করা সম্ভব হয়েছে, যথা

(১) টিকাদান পদ্ধতি
(২) এ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা জীবাণুনাশক পদ্ধতি এবং
(৩) রোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি চলাকালে দেহের ক্ষয়পূরণ পদ্ধতি।
১। টিকাদান পদ্ধতি :
যে সকল রোগজীবাণুকে মানবদেহের বাইরে কৃত্রিমভাবে অন্য কোন মাধ্যমের ভিতর কালচার বা চাষ করা সম্ভব হয়েছে সে সকল রোগজীবাণুকে মৃতপ্রায় বা এ্যাটেনুয়েটেড করে অতি অল্প পরিমাণে একটি সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে রোগপ্রতিরোধ বাহিনী রোগজীবাণুটিকে চিনে নিয়ে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সক্ষম বাহিনীকে দেহের সকল প্রবেশদ্বারে মোতায়েন করে রাখে। ফলে অনুরূপ রোগজীবাণু মানুষের দেহে প্রবেশ করতে গেলে তাদেরকে ধবংস করা হয়। এরই নাম টিকাদান পদ্ধতি। কলেরা, বসন্ত, হাম, পোলিও, ধনুষ্টংকার ইত্যাদি মাত্র গুটিকয়েক সংক্রামক রোগকে এই পদ্ধতিতে বিশ্ব হতে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে । যদিও যক্ষা রোগের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে কিন্তু কিছু অজ্ঞাত কারণে একে সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।
২। এ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা জীবাণুনাশক পদ্ধতি :

যে সকল জীবাণুকে দেহের বাইরে চাষ করে টিকা তৈরি করা যায় না, সেগুলোর ভিতর কতগুলো জীবাণুকে ধ্বংস করার জন্য এ্যান্টিবায়োটিক নামক জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সব ধরনের জীবাণু এবং ভাইরাসকে এ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা বিনাশ করা সম্ভব নয় । এ্যান্টিবায়োটিকের এই সীমাবদ্ধতার ফলে সংক্রামক ব্যাধিসমুহকে ষোলআনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি ।
৩। রোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি চলাকালে দেহের ক্ষয়পূরণ পদ্ধতি :

এ্যান্টিবায়োটিক কিংবা টীকা দ্বারা যে জীবাণুকে দমন করা যায় না, সে সকল ক্ষেত্রে অসুস্থ দেহের রোগকষ্টজনিত ক্ষয়পূরণ করে অপেক্ষা করতে হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না রোগীর দেহের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ বাহিনী শক্তিসঞ্চয় করে বহিঃশত্রুকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। উদাহরণস্বরূপ, ডায়ারিয়া রোগের বেলায় যেমন ওরস্যালাইন খাইয়ে পানিশূন্যতাজনিত ক্ষয়পূরণ করা হয়। তেমনিভাবে বেদনা নাশক , পাতলা পায়খানা রোধক , বমি নাশক ,জ্বর নাশক ইত্যাদি ঔষধের দ্বারা দেহের ক্ষতিকে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়, যাতে রোগকষ্ট রোগীর প্রাণনাশ করতে না পারে । এ যাবত যে সকল রোগের কথা বলা হল সেগুলো হচ্ছে সংক্রামক রোগ। এদের সৃষ্টির কারণকে বিজ্ঞানীরা সনাক্ত করতে পেরেছেন। তাই এদের কোন না কোন উপায়ে প্রতিকার করা সম্ভব হয়েছে।
অসংক্রামক রোগ সম্বন্ধে আধুনিক মতবাদ :

এবার আমরা অসংক্রামক ব্যাধির কথা বলব। বাত, শিরঃপীড়া, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ,ক্যান্সার ইত্যাদি অসংখ্য রোগ হচ্ছে এই শ্রেণীভূক্ত। এ ধরনের রোগ ছোঁয়াচে নয়। এদের কারণ হিসেবে কোন জীবাণু বা ভাইরাস বা কোন রোগবিষকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা এ ধরনের রোগসমূহের কারণ খুঁজতে গিয়ে অনেক জটিল তথ্য জানতে পেরেছেন। ইমিউনোলজি বা রোগপ্রতিরোধ বিদ্যার বিকাশের পূর্বে চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা অসংক্রামক রোগের কারণ হিসাবে রোগ জীবাণুকেই দায়ী করতেন। কিন্তু পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন যে, দেহকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য যে প্রতিরক্ষা বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে, তাদেরই কর্মক্ষমতার বিশৃঙ্খলার কারণে মানবদেহের প্রায় সকল প্রকারের অসংক্রামক রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্বল এবং অদক্ষ রোগপ্রতিরোধ বাহিনী যদি শক্তিশালী রোগবিষকে আক্রমণ করে দ্রুত ধবংস সাধন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে দীর্ঘমেয়াদী লড়াই চলতে থাকে। এই লড়াইয়ের ফলে দেহের সুস্থ কোষ ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা ধবংস প্রাপ্ত হতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কোন দেশের দুর্বল রক্ষীবাহিনী যদি শক্তিশালী বহিরাগত শত্রুর সাথে দেশের মাটিতে লড়াই করে শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করতে ব্যর্থ হয় এবং দীর্ঘ মেয়াদী লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, তাহলে দেশের নিরীহ জনসাধারণই ক্ষতিগ্রস্ত হন। যাকে আমরা লড়াইয়ের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলে আখ্যায়িত করতে পারি। এহেন পরিস্থিতিতে নানাবিধ রোগলক্ষণ সৃষ্টি হয় যেগুলোকে ইমিউনোলজি বিজ্ঞানের ভাষায় রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা জনিত রোগ বলে আখ্যায়িত করা হয় ।

রোগপ্রতিরোধ বাহিনী বা ইমিউন সিস্টেম  এর কর্মকান্ডের বিশৃঙ্খলার ফলে সৃষ্ট রোগসমূহ বা ডিজিজেস ডিউ টু ইমিউনোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারসকে নিম্নোক্ত তিনটি ভাগে বিভক্ত করা চলে, যথা-

(ক) রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর প্রতিক্রিয়াজনিত রোগ
(খ) রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর স্বপক্ষ বিরোধী ক্রিয়াজনিত রোগ
(গ) রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর দুর্বলতাজনিত রোগ

(ক)রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর প্রতিক্রিয়াজনিত রোগ :
রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর কাজ হচ্ছে দেহের ক্ষতিকর রোগবিষকে ধ্বংস করা। এ কাজটি করার উদ্দেশ্যে বাহিনীর সদস্যরা রোগবিষকে আক্রমন করতে গিয়ে দেহের সুস্থ কোষসমূহকে কখনও উত্তেজিত করে সৃষ্টি করে অতি সংবেদনশীলতা জনিত প্রতিক্রিয়া । এহেন উত্তেজনার ফলে সৃষ্ট রোগের নাম এ্যালার্জি । আবার কখনও সুস্থ দেহকোষকে ধ্বংস প্রাপ্ত করে ফেলে যার নাম দেহকোষ ধবংসকারী প্রতিক্রিয়া । আবার কখনো প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং রোগবিষ যুদ্ধরত অবস্থায় একত্রে জটলা পাকিয়ে সৃষ্টি করে ইমিউন কমপ্লেক্স সাবস্ট্যান্স যা দেহের মধ্যে জমতে থাকে, ফলে দেহকোষে পচন ধরে যায়। এর নাম রোগ প্রতিরোধক উপাদানের সঙ্গে রোগবিষের জটিল মিশ্রণ দ্বারা সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া । এমন ধরনের প্রতিক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট রোগসমূহ হচ্ছে হাঁপানি, কুষ্ঠ, কিডনী প্রদাহ, রক্ত শূণ্যতা ইত্যাদি।
(খ) অটোইমিউন ডিজিজ বা রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর স্বপক্ষবিরোধী ক্রিয়াজনিত রোগ : দেহের জন্য ক্ষতিকর রোগবিষকে ধ্বংস করতে হলে রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর একটি জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। তা হচ্ছে দেহের অসংখ্য প্রয়োজনীয় নির্দোষ উপাদানের মধ্য থেকে ক্ষতিকর উপাদানকে পৃথক করতে পারা। কখনো কখনো রোগপ্রতিরোধ বাহিনী এই ক্ষমতা হারিয়ে বসে এবং ভূলক্রমে দেহের প্রয়োজনীয় উপাদানকে ধ্বংস করতে শুরু করে। এ ধরনের রোগের নাম অটোইমিউন ডিজিজ। দেহের প্যাংক্রিয়াসের কোষকে কিংবা ইনসুলিনকে শত্রু ভেবে ধ্বংস করার ফলে সৃষ্ট এ ধরনের রোগের উদাহরণ হচ্ছে ডায়াবেটিস। এমনিভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ বাহিনী পুরুষের শুক্রাণূ এবং স্ত্রীলোকের ডিম্বাণূকে ধ্বংস করে সৃষ্টি করে থাকে সন্তান জন্মদানের অক্ষমতা বা ইনফার্টাইলিটি  ।

(গ) ইমিউনোডিফিশিয়েন্সি ডিজিজ বা রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর দূর্বলতাজনিত রোগ : দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর দূর্বলতা জন্মালে রোগবিষেরা দেহের মধ্যে ইচ্ছামত বিচরণ করতে থাকে। এ সময় কোন ঔষধই কাজ করতে পারেনা। বার বার জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে থাকে। এ ভাবে ঘন ঘন ফোঁড়া হওয়া, একজিমা, পাতলা পায়খানা, দৈহিক বৃদ্ধির অভাব, অস্থিমজ্জার প্রদাহ, এমনি শত শত রোগ চিকিত্সক এবং রোগীকে সমস্যার মধ্যে ফেলে দেয়। দেহের এমনি অবস্থায় কতগুলো ক্যান্সার জন্মদানকারী বা অঙ্কোজেনিক ভাইরাস দেহের সুস্থ কোষের ভিতর প্রবেশ করে মানুষের ডি, এন, এ,র ভাষার পরিবর্তন ঘটিয়ে ভাইরাসের ডি,এন,এ, ‘র ভাষায় রূপান্তরিত করে ফেলে । তখন ঐ সকল দেহকোষের চরিত্র মানুষের দেহকোষের পরিবর্তে ভাইরাসের কোষের চরিত্রে রূপান্তরিত হয়ে যায়। ঐ সকল দেহকোষকেই ক্যান্সার কোষ বলে আখ্যায়িত করা হয়, যেগুলো মানুষের দেহের পুষ্টি গ্রহণ করে দ্রুত বাড়তে থাকে এবং আশ্রয়দাতা মানুষটিকেই মেরে ফেলে । মানব দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার এহেন দূর্বলতাই হচ্ছে ক্যান্সার রোগ সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। এমনিভাবে অসংখ্য রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর দূর্বলতা , যে কারণে হেপাটাইটিসের মতো অনেক ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে দীর্ঘ দিন যাবত লিভারের ক্ষতিসাধন করে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো রোগের সৃষ্টি করে থাকে । প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ যে, এইচ,আই,ভি,নামক ভাইরাস সুস্থ মানবদেহে প্রবেশ করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধবংস করে এইডস নামক যে রোগের জন্ম দেয় সেটাও একই শ্রেণীভুক্ত। তফাত হচ্ছে এই যে, এইচ,আই,ভি, দেহে প্রবেশ করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার দূর্বলতা সৃষ্টি করে থাকে।

অসংক্রামক রোগের প্রচলিত আধুনিক চিকিত্সা : অসংক্রামক রোগের বেলায় প্রচলিত আধুনিক চিকিত্সা হচ্ছে রোগকষ্টকে উপশম করার জন্য জ্বরনাশক, বেদনানাশক, পাতলা পায়খানা রোধক, উচ্চ রক্তচাপ নিবারক, কোষ্ঠ পরিস্কারক, মূত্রকারক ইত্যাদি ঔষধ ব্যবহার করা। এর চাইতে অধিকতর শক্তিশালী ঔষধ হিষ্টামাইন বিরোধী বা এ্যান্টিহিস্টামাইন এবং হরমন বা স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ। হরমন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে রোগকষ্ট কমে যায় কিন্তু রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমশঃ দূর্বল হতে থাকে। এরকম চিকিত্সার নাম রোগপ্রতিরোধ শক্তি অবদমন বা ইমিউনোসাপ্রেশন। এমনিভাবে রোগপ্রতিরোধ শক্তিকে অবদমনের দ্বারা রোগকষ্ট কমিয়ে রাখার পরিণতি হচ্ছে দেহকে বিষাক্ত পদার্থের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত করা।
যদিও উপরোক্ত তিন প্রকার রোগের পিছনে রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর বিশৃঙ্খলা দায়ী, তথাপি এই বিশৃঙ্খলার জন্য মূলতঃ দায়ী হচ্ছে দেহে প্রবিষ্ট রোগবিষ সমুহকে কোন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ধ্বংস করার বিষয়ে দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর অক্ষমতা । বহিরাগত রোগবিষসমুহকে দেহকোষের কাছে পৌছার আগেই যদি রক্তপ্রবাহের মাঝে থাকতেই ধবংস করা সম্ভব হতো তাহলে দেহকোষের ক্ষতি সাধিত হতো না । এর জন্য প্রয়োজন সুস্থ ও সুদক্ষ শ্বেতকণিকার, যারা অহেতুক বিলম্বিত লড়াইয়ের দ্বারা সুস্থ দেহের স্বাভাবিক কর্মকান্ডের ভিতর বিশৃঙ্খলাজনিত রোগলক্ষণ সৃষ্টি না করে কেবলমাত্র ক্ষতিকর জীবিত বা মৃত রোগবিষ সমুহকে ধবংস করে ফেলতে পারে । যেমনটি করছে একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ বাহিনী । রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর দূর্বলতার সুযোগে দেহে জন্ম নিচ্ছে অজ্ঞাত পরিচয় রোগবিষের আধিক্য । আর এই সুযোগকে বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করছে রোগবিষকে সনাক্ত করে ধবংস করার কাজে রোগপ্রতিরোধ বাহিনীকে সাহায্য করতে না পারা, একথাটা বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেও ঐ সব রোগবিষসমূহকে তারা সনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছেন না। ঐ সকল অজ্ঞাত পরিচয় রোগবিষকে সনাক্ত করে ধ্বংস না করতে পেরে শুধুমাত্র রোগকষ্ট উপশমকারী বা প্যালিয়েটিভ যে চিকিত্সা দীর্ঘদিন যাবত পৃথিবীতে প্রচলিত রয়েছে তার দ্বারা দেহের আভ্যন্তরীণ পরিবেশ অধিকতর রোগবিষের আবাসভূমিতে পরিণত হচ্ছে,যা উপরোক্ত বিশৃঙ্খলাকে ক্রমাগত বাড়িয়েই চলেছে বলে হোমিও বিজ্ঞানীদের ধারনা। অসংক্রামক  রোগের মধ্যে ক্যান্সার রোগকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অসংক্রামক রোগের রোগবিষকে সনাক্ত করা সম্ভব না হলেও কেবলমাত্র কতিপয় ক্যান্সার রোগের বেলায় ক্যান্সার কোষের মধ্য থেকে এক ধরনের রোগবিষকে পৃথক করা সম্ভব হয়েছে। ক্যান্সার রোগীর দেহ থেকে সংগৃহীত রোগবিষকে একই রোগীর দেহে ইনজেকশনের দ্বারা প্রয়োগ করে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে রোধ করার চেষ্টাও আংশিক ভাবে সফল হয়েছে। এটা অনেকটা ক্যান্সার রোগের টীকার মত কাজ করছে বলে ধরে নেওয়া যায়। এর দ্বারা অপারেশন করে ক্যান্সারের টিউমার অপসারণ করার পর ক্যান্সারের বৃদ্ধিকে আংশিকভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হলেও ক্যান্সার আরোগ্য করা সম্ভব হচ্ছে না।অথচ বিজ্ঞানীরা বিসিজি নামক যক্ষ্মা রোগের টীকাতে ব্যবহৃত মৃতপ্রায় যক্ষ্মারোগ জীবাণুকে ত্বকের, রক্তের, স্তনের এবং ফুসফুসের ক্যান্সার রোগীর দেহে ইনজেকশনের দ্বারা প্রয়োগ করে ক্যান্সার আরোগ্য করতে আংশিকভাবে সফল হয়েছেন। চিকিত্সা বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার–এ্যাডজুভ্যান্ট বা উদ্দীপক দ্বারা রোগপ্রতিরোধ বাহিনীকে উদ্দীপিতকরণ; এই পদ্ধতির সাহায্যেই মূলতঃ কলেরা, বসন্ত, হাম, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগের টীকাতে ব্যবহৃত জীবাণু বা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগবিষ ব্যবহার করে রোগ প্রতিহত করা কিংবা ক্যান্সার রোগবিষ বা বিসিজি টীকার দ্বারা ক্যান্সার প্রতিরোধ করা, এদুটো প্রক্রিয়াই সংঘটিত হচ্ছে । যার নাম রোগপ্রতিরোধ শক্তি উদ্দীপিতকরণ বা ইমিউনোস্টিমুলেশন । যে সকল বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে কাজটি করা হয় তাদের নাম উদ্দীপক বা এ্যাডজুভ্যান্ট ।
১৯৪২ সালে বিজ্ঞানী ফ্রয়েন্ড প্রক্রিয়াটি আবিষ্কার করেন। দেহের মাঝে বিদ্যমান নয় এমন কিছু বিজাতীয় বিষাক্ত পদার্থকে দেহের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিলে রোগ প্রতিরোধ বাহিনী উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং দেহে প্রবিষ্ট নতুন বিষাক্ত পদার্থসমূহকে ধ্বংস করতে গিয়ে দেহের মধ্যে বিদ্যমান অনুরূপ সকল পুরাতন রোগবিষকেও ধ্বংস করে ফেলে। ফলে রোগীর দেহের অনেক ধরনের রোগকষ্ট দূরীভূত হয়ে যায়।সংক্রামক রোগসমূহের রোগবিষ দেহে প্রবেশ করে বেশিদিন লুকিয়ে থাকতে পারে না। হয় রোগপ্রতিরোধ বাহিনী শীঘ্রই তাদেরকে সনাক্ত করে ধ্বংস করে ফেলে, নয়তো রোগবিষ দ্বারা রোগীর মৃত্তু ঘটে। কিন্তু অসংক্রামক রোগের বেলায় রোগবিষ দীর্ঘদিন দেহের ভেতর লুকিয়ে থাকে এবং দেহকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্থ করতে থাকে। তাদেরকে দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনী যে কেন সনাক্ত করে ধ্বংস করে না তার একটা সম্ভাব্য কারণ বিজ্ঞানীরা চিন্তা করে বের করেছেন। রোগবিষের প্রতি দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর সহনশীলতা বা ইমিউন টলারেন্সকে এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এহেন সহনশীলতাকে ভেঙ্গে দিতে পারে যে সকল পদার্থ তারাই হচ্ছে উদ্দীপক বা এ্যাডজুভ্যান্ট ।
উদ্দীপক দু’ধরনের হতে পারে যথা- সুনির্দিষ্ট বা স্পেসিফিক উদ্দীপক এবং অনির্দিষ্ট বা নন-স্পেসিফিক উদ্দীপক । দেহের মধ্যে রোগ সৃষ্টি করছে যে রোগবিষ তার অবিকল অনুরূপ বা ডুপ্লিকেট বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা তৈরী উদ্দীপক হচ্ছে সুনির্দিষ্ট উদ্দীপক । যেমন, যক্ষ্মা রোগের মৃতপ্রায় জীবাণু দ্বারা তৈরী টীকার দ্বারা যথন যক্ষ্মা রোগকে প্রতিরোধ করা হয়, সেই টীকাকে আমরা বলব সুনির্দিষ্ট উদ্দীপক । এমনিভাবে সংক্রামক ব্যাধির বেলায় রোগজীবাণুর মৃতপ্রায় দেহ দ্বারা তৈরি টিকাসমূহ এবং ক্যান্সার কোষ হতে সংগৃহীত বিষাক্ত রোগবিষ দ্বারা তৈরি উদ্দীপকসমূহ হচ্ছে সুনির্দিষ্ট উদ্দীপক।
কিন্তু যক্ষ্মা রোগজীবাণুর মৃতপ্রায় দেহ দিয়ে তৈরি বিসিজি টীকার বিষকে যদি ক্যান্সার আরোগ্যের কাজে উদ্দীপক হিসাবে ব্যবহার করা হয় তাহলে সে ধরনের উদ্দীপককে অনির্দিষ্ট উদ্দীপক বলা হবে। মানবদেহের রোগ সৃষ্টিকারক যে সকল রোগবিষকে সনাক্ত করে দেহের বাইরে কালচার বা চাষ করা গিয়েছে, সে সকল রোগকে প্রতিরোধ বা প্রতিকার করার উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট উদ্দীপক তৈরি করা গিয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডায়রিয়া, সিফিলিস, গণোরিয়া ইত্যাদি রোগের ভাইরাস এবং জীবাণুকে মানবদেহের বাইরে চাষ করা সম্ভব হয়নি বলে তাদের টীকা তৈরি করাও সম্ভব হয়নি। সমস্যা থেকে গিয়েছে সেই সকল রোগের বেলায় যাদের রোগবিষকে সনাক্ত করা যায়নি। যে রোগবিষকে সনাক্ত করা যায়নি তার অবিকল অনুরূপ উদ্দীপক নির্ধারণ করাও সম্ভব হয়নি।আধুনিক ইমিউনোলজি বিজ্ঞানের অগ্রগতি এই একটি কারণে প্রধানতঃ বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। অসংক্রামক রোগের সৃষ্টির পিছনে দায়ী হচ্ছে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা। আর সেই বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী হচ্ছে দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর দূর্বলতা , যে দুর্বলতার কারণে রোগপ্রতিরোধ বাহিনী রোগবিষসমুহকে সনাক্ত করে দেহের প্রবেশ দ্বারসমুহ দিয়ে প্রবেশমাত্রই ধবংস করতে পারছে না, যেমনটি পারছে একজন সুস্থব্যক্তির দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনী। যার ফলে রোগবিষেরা দেহের গভীরে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে যেখানে দুর্বল রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর সঙ্গে রোগবিষের দীর্ঘমেয়াদী লড়াই দেহকোষসমুহকে কখনোও উত্তেজিত, কখনোও ধবংসপ্রাপ্ত আবার কখনোও ক্ষতিগ্রস্ত করে সৃষ্টি করছে সব জটিল রোগ যা আমরা পূর্বেই বলেছি । এরূপ অজ্ঞাত পরিচয় রোগবিষকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে উত্তেজিতকরণ বা ইমিউনোষ্টিমুলেশন পদ্ধতিকে বিজ্ঞানীরা কখনো প্রয়োগ করার চেষ্টা করেননি বা করলেও ব্যর্থ হয়েছেন । বিজ্ঞানীরা অসংক্রামক বা নন-ইনফেকশাস রোগসমুহের মধ্যে কেবলমাত্র ক্যান্সার রোগের সমাধান খুঁজতে গিয়ে কতিপয় ক্যান্সারের রোগবিষকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই ক্যান্সারের রোগবিষ দিয়ে কিংবা বিসিজি টিকার সাহায্যে উদ্দীপিতকরণ পদ্ধতির উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। এতে আংশিক সাফল্যও অর্জিত হয়েছে।
এরূপ সাফল্য আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে ক্যান্সার ছাড়া অন্যান্য অসংক্রামক রোগের আরোগ্যের উদ্দেশ্যে উদ্দীপিতকরণ প্রক্রিয়াকে প্রয়োগ করার কথা ভাবতে। এ পথে একমাত্র বাধা হচ্ছে, প্রচলিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দেহস্থ রোগবিষসমূহকে সনাক্ত করতে না পারা। অতীতে বিজ্ঞান বার বার এ ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছে। পদার্থ বিদ্যার প্রধান শক্তিগুলো হচ্ছে তাপ, আলো, শব্দ, বিদ্দুত এবং চুম্বক শক্তি। এদের কোনটিকেই চোখে দেখা সম্ভব হয়নি। অথচ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানীরা পরোক্ষ পদ্ধতি বা ইনডিরেক্ট মেথড এর সাহায্যে এ সকল অপরিমেয় বা ইম্পন্ডারেবল শক্তিকে জয় করার উপায় বের করেছেন।
রোগবিষকে চোখে দেখা যাচ্ছে না, এমনকি অনূবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও না। অথচ এরা রোগ উৎপাদন করে চলেছে। আমাদের প্রচেষ্টা হবে রোগবিষকে সনাক্ত করার কোন বিকল্প পদ্ধতি খুঁজে বের করা। এই প্রচেষ্টায় আমরা নিজস্ব কোন গবেষণালব্ধ পদ্ধতি নয়, বরং প্রচলিত প্রাচীন ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতির প্রক্রিয়াসমূহকে আধুনিক ইমিউনোলজি বিজ্ঞানের গবেষণালব্ধ তথ্যের আলোকে বিশ্লেষণ করে এদের গ্রহণযোগ্যতাকে যাচাই করে দেখে ব্যবহার করার জন্য সুপারিশ করব।

ইমিউনোলজি বিজ্ঞানের সঙ্গে ভেষজ বিজ্ঞানের সাদৃশ্য বিচার : আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী একজন সুস্থ মানুষকে ধুতরা বিষ দিয়ে উন্মাদ করা যায়, আবার সেই ধুতরা বিষ দিয়ে উন্মাদ রোগীকে আরোগ্য করা হয় (সূত্র : চিরজ্ঞীব বনৌষধি, পৃঃ ২৮১, প্রথম খন্ড)। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, যে বিষ একজন সুস্থ ব্যক্তিকে উন্মাদ করতে পারে, সেই বিষই একজন উন্মাদ রোগীকে আরোগ্য করতে পারে।সুস্থ ব্যাক্তিকে ভেষজ সেবন করিয়ে কৃত্রিম রোগ উত্পাদন করার এই ক্ষমতাকে বিশদভাবে পরীক্ষা করে তার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছিল হোমিওপ্যাথি বিজ্ঞান। হোমিও বিজ্ঞানীরা আধুনিক ইমিউনোলজির জ্ঞান ছাড়াই কল্পনার আশ্রয় নিয়ে অসংক্রামক রোগ চিকিত্সার এক পদ্ধতির প্রচলন করেছিলেন। হোমিও আরোগ্য নীতিকে হোমিও বিজ্ঞানীদের নিজস্ব ভাষার ব্যাখ্যা না করে আধুনিক ইমিউনোলজির ভাষার ব্যাখ্যা করলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে নিম্নরূপ।

একজন প্রাকৃতিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির দেহে যে সকল রোগ লক্ষণ দেখা যায় সেগুলি হচ্ছে প্রাকৃতিক  রোগ লক্ষণ আর একজন সুস্থ ব্যক্তিকে ভেষজ পদার্থ সেবন করিয়ে যে রোগ লক্ষণ সৃষ্টি করা যায়, তা হচ্ছে কৃত্রিম রোগ লক্ষণ। প্রাকৃতিক রোগ লক্ষণের জন্য দায়ী হচ্ছে প্রাকৃতিক রোগবিষ আর কৃত্রিম রোগ লক্ষণের জন্য যে দায়ী হচ্ছে ভেষজ বিষ। প্রাকৃতিক রোগ লক্ষণ এবং কৃত্রিম রোগ লক্ষণের মধ্যে সাদৃশ্য বিচার করে ভেষজ বিষটিকে বাছাই করতে হয়। এবার বাছাই করা ভেষজ বিষকে অতি অল্প পরিমাণে অসুস্থ ব্যক্তিকে মুখে খাইয়ে দিলে রোগীর দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনী উদ্দীপিত হয়ে উঠে এবং মুখে খাওয়ানো ভেষজ বিষকে ধ্বংস করতে গিয়ে দেহে বিদ্যমান অনুরূপ রোগবিষকে ধ্বংস করে ফেলে। যার ফলে রোগী রোগমুক্ত হয়।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, ভেষজ শব্দটির অর্থ হচ্ছে যাহা রোগকে জয় করে অর্থাত ঔষধ। যে সকল উপাদান রোগকে আরোগ্য করতে পারে সেগুলোকেই ভেষজ বলা হয়। কিন্তু ভেষজকে ভেষজবিষ বলার পিছনে যুক্তি হচ্ছে যে, যে উপাদান একজন সুস্থ মানব দেহে কৃত্রিম রোগ লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে সেই উপাদান নিঃসন্দেহে মানবদেহের জন্য বিষতুল্য। এহেন বিষাক্ত গুণাগুণ ব্যতীত কোন উপাদান মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনীকে উত্তেজিত করার মত ক্ষমতার অধিকারী হতে পারবে না।
সুতরাং মানবদেহের প্রাকৃতিকভাবে অর্জিত রোগবিষকে দেহ থেকে রোগ প্রতিরোধ বাহিনীর সাহায্যে নির্মূল করে দেহকে রোগমূক্ত করতে সক্ষম যে কোন পদার্থের ভিতরে বিষাক্ত গুণাগুণ থাকা অপরিহার্য। তাই ঔষধকে ‘ভেষজবিষ’ বা উদ্দীপক বিষ নামে আখ্যায়িত করার দ্বারা ঔষধের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা হয়েছে।
হোমিও পদ্ধতিতে এরূপ ভেষজ উপাদান শুধুমাত্র উদ্ভিদ জগত নয় বরং প্রাণীজ, খনিজ এবং রোগজীবাণুজাত উত্স থেকে সংগৃহীত হয়ে থাকে, যার সঙ্গে ইমিউনোলজি বিজ্ঞানী ফ্রয়েন্ডের উদ্দীপককের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
আয়ূর্বেদ শাস্ত্রের ন্যায় হোমিওপ্যাথি শাস্ত্রেও ধূতরা বিষ দ্বারা উন্মাদ রোগের চিকিত্সা করা হয়। যেহেতু ধূতরা বিষ দ্বারা সকল প্রকারের উন্মাদ রোগ আরোগ্য করা যায় না, সেহেতু ধূতরা বিষকেও বিসিজি টিকার দ্বারা ক্যান্সার চিকিত্সার মত অনির্দিষ্ট উদ্দীপক বলে পরিগণিত করা যেতে পারে। কারণ বিসিজি টিকার দ্বারা পরীক্ষিত প্রতিটি ক্যান্সার রোগীকে যেমন আরোগ্য করা সম্ভব হয়নি, ঠিক তেমনি ধূতরা বিষ দ্বারাও প্রতিটি উন্মাদ রোগীকে আরোগ্য করা সম্ভব হয়নি।
অথচ বিসিজি টিকা যক্ষ্মারোগের বেলায় একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে। কারণ বিসিজি টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের প্রায় ১০০% ক্ষেত্রে যক্ষ্মারোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, একটি উদ্দীপক কোন না কোন রোগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট উদ্দীপকের ভূমিকা পালন করতে পারে। আয়ূর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী একটি মাত্র প্রধান লক্ষণের উপর ভিত্তি করে উত্তেজক বাছাই করলে সেই উদ্দেশ্যে সাধিত হয় না।
নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিতে এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করলেন হোমিও বিজ্ঞানীরা। ধূতরা বিষ বা ষ্ট্র্যামোনিয়াম দিয়ে উন্মাদ রোগের চিকিত্সায় ব্যর্থতার হার কমানোর লক্ষ্যে এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রচেষ্টা চালালেন তারা।
কি ধরনের উন্মাদ রোগীর বেলায় ধূতরা বিষ ১০০% ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করবে তার সঠিক তথ্যটি নির্ধারণ করতে চেষ্টা করলেন হোমিও বিজ্ঞানীরা। তারা ধূতরা বিষকে অল্পমাত্রায় বহুসংখ্যক সুস্থ ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন যাবত খাইয়ে কৃত্রিম রোগ লক্ষণ সৃষ্টি করতে লাগলেন। এ ধরনের সুস্থ ব্যক্তিদের বেশির ভাগ ছিলেন ইউরোপ এবং আমেরিকার এম,ডি, ডিগ্রীধারী এ্যালোপ্যাথি ত্যাগ করে হোমিওপ্যাথি মতে বিশ্বাস এনেছেন এমন পরিবর্তিত চিকিত্সবৃন্দ। পরীক্ষায় দেখা গেল যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উন্মাদনার সঙ্গে কতগুলি বিশেষ লক্ষণ দেখা দিতে লাগল। লক্ষণগুলি হচ্ছে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গী বিশেষতঃ বিবস্ত্র হবার প্রবণতা, গালি দেওয়ার প্রবণতা, আলোতে এবং লোকসান্নিদ্ধে থাকার ইচ্ছা এবং বক বক করার প্রবণতা। হোমিও বিজ্ঞানীরা এগুলোকে সূচক লক্ষণ বলে আখ্যায়িত করলেন। উন্মাদনার সঙ্গে এহেন লক্ষণের ২/৩ টি সূচক লক্ষণ যে রোগীর মধ্যে বিদ্যমান থাকবে তাদের বেলায় ধূতরা বিষ প্রায় ১০০% ক্ষেত্রে সুফল প্রদান করতে পারবে বলে তারা মতামত ব্যক্ত করলেন। কার্যতঃ অসুস্থ রোগীকে মুখে খাইয়ে পরীক্ষার দ্বারা এই নীতির সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে বলে হোমিও বিজ্ঞানী তথা চিকিত্সকরা দীর্ঘদিন যাবত দাবী করে আসছেন। যে সকল উন্মাদ রোগীর বিষন্নতা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়, তাদের বেলায় স্বর্ণধাতুর সূক্ষ্মচূর্ণ দ্বারা তৈরি ঔষধ আরোগ্য সম্পাদন করতে ১০০% ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে বলে জানা যায়। কারণ সুস্থ ব্যক্তিকে স্বর্ণচূর্ণ খাইয়ে পরীক্ষার সময় অনুরূপ সূচক লক্ষণ সৃষ্টি হতে দেখা গিয়েছিল। সুস্থ ব্যক্তিকে ধূতরা বিষ খাইয়ে পরীক্ষার সময় অনুরূপ সূচক লক্ষণ প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি বলে স্বর্ণচূর্ণের স্থলে ধূতরার বিষ আরোগ্য সম্পাদন করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে হোমিও বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
সুস্থ ব্যক্তিদেরকে মুখে খাইয়ে এমন ধরনের শত শত ভেষজ উদ্দীপকের সূচক লক্ষণ নির্ধারণ করে হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকা নামক পুস্তকে লিপিবদ্ধ করা রয়েছে যার সাহায্যে বাছাই করে হোমিও চিকিত্সকগণ রোগীর উপর ঔষধ প্রয়োগ করে থাকেন। হোমিও পদ্ধতিতে ব্যবহৃত এহেন রোগলক্ষণের সাহায্যে পরিচালিত চিকিত্সা পদ্ধতিকে ডাঃ গার্থ বোরিক এম,ডি প্রমুখ আমেরিকান হোমিওপ্যাথগণ লক্ষণ সাদৃশ্য বা সিম্পটম এ্যানালজি দ্বারা চিকিত্সা পদ্ধতি বলে আখ্যায়িত করে গিয়েছেন। (তথ্য সূত্র নং-৪)
ভেষজ চিকিত্সা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত এরূপ আরোগ্য নীতিকে ‘বিষদ্বারা বিষনাশ’ (বিষস্য বিষমৌষধম) বলে প্রাচীন ভেষজ বিজ্ঞানীদের দ্বারা আখ্যায়িত হয়ে এসেছে। আধুনিক ইমিউনোলজির আলোকে এই বহুল ব্যবহৃত প্রাচীন আরোগ্য পদ্ধতিকে উদ্দীপক বা এ্যাডজুভ্যান্ট দ্বারা রোগপ্রতিরোধ বাহিনীকে উত্তেজিতকরণের সাহায্যে রোগবিষ বা এ্যান্টিজেন নাশ করার পদ্ধতি’ বলে আখ্যায়িত করা যেতে পারে । আধুনিক ইমিউনোলজির জ্ঞানের আলোকে উপরোক্ত হোমিও পদ্ধতির সাহায্যে ভেষজ বাছাই করণ এবং আরোগ্য পদ্ধতিকে ‘লক্ষণ সাদৃশ্যের দ্বারা উত্তেজক বাছাই এবং মৌখিক উত্তেজিত করণ পদ্ধতির সাহায্যে অসংক্রামক রোগ নিরাময় পদ্ধতি বলে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। উপরোক্ত ভেষজ চিকিত্সা পদ্ধতিসমূহের মধ্যে ব্যবহৃত ব্যতিক্রমধর্মী প্রক্রিয়াসমূহ হচ্ছে-
১। প্রাকৃতিক রোগ লক্ষণ দ্বারা অজ্ঞাত পরিচয় রোগবিষকে চিহ্নিত করা
২। কৃত্রিম রোগ লক্ষণ দ্বারা ভেষজসমূহকে চিহ্নিত করা
৩। প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম রোগ লক্ষণসমূহকে তুলনা করে সদৃশতম রোগ লক্ষণের দ্বারা একটি ভেষজকে বাছাই করা
৪। ভেষজটিকে লঘু এবং সুস্বাদু করে ইনজেকশনের পরিবর্তে মুখে খাইয়ে রোগীর দেহে প্রয়োগকরা।
ইমিউনোলজি বিজ্ঞানের সঙ্গে প্রাচীন ভেষজ বিজ্ঞানের সাদৃশ্য বিচার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি। আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সংক্রামক নয় এমন সকল রোগের অজ্ঞাত পরিচয় রোগবিষেরা। তাদের প্রকৃত রূপকে উন্মোচন করতে ব্যর্থ হচ্ছে চিকিত্সা বিজ্ঞানের সব শক্তিধর যন্ত্রগুলো। যার ফলে চিকিত্সা বিজ্ঞানীদের পরিশ্রমলব্ধ ইমিউন সিস্টেম সম্বন্ধে এমন একটি জ্ঞানকে অসংক্রামক রোগের চিকিত্সার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য উপরোক্ত ভেষজ বিজ্ঞানের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের কার্যকারিতাকে আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে পরীক্ষার দ্বারা যাচাই করে দেখা যেতে পারে।
আধুনিক বিজ্ঞানীদের দ্বারা যদি প্রাচীন ভেষজ চিকিত্সার এরূপ নবমূল্যায়ন গ্রহনযোগ্য বলে বিবেচিত হয়, তাহলে চিকিত্সা বিজ্ঞানের বর্তমান দুটি বাধা অপসারিত হতে পারে, যথা- (১) ইমিউনোথেরাপিতে ব্যবহৃত ইনজেকশনের দ্বারা প্রয়োগযোগ্য উদ্দীপকের স্বল্পতাজনিত প্রতিবন্ধকতা এবং (২) অজ্ঞাত পরিচয় প্রাকৃতিক রোগবিষসমূহকে প্রচলিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সনাক্ত না করতে পারার কারণে সুনির্দিষ্ট উদ্দীপিতকরণ পদ্ধতির ব্যবহার করতে না পারা।
১। ইমিউনোথেরাপিতে ব্যবহৃত ইনজেকশনের দ্বারা প্রয়োগযোগ্য উদ্দীপকের স্বল্পতাজনিত প্রতিবন্ধকতা : ইমিউনোথেরাপিতে ক্যান্সার চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত উদ্দীপককে ইনজেকশনের দ্বারা প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। ইনজেকশনের দ্বারা যে কোন ভেষজ উপাদানকে প্রয়োগ করাতে মানবদেহে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাই চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা ইন্টারফেরন, ইন্টারলিউকিন ইত্যাদি মাত্র গুটিকয়েক উদ্দীপক আবিষ্কার করতে পেরেছেন। যা ইনজেকশনের দ্বারা প্রয়োগ করা সম্ভব। ইনজেকশনের পরিবর্তে উত্তেজকের মৌখিক প্রয়োগ যদি বিজ্ঞান সম্মত বলে স্বীকৃতি লাভ করে, তাহলে ভেষজ চিকিত্সা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অসংখ্য ভেষজ উপাদান মৌখিক উদ্দীপকের স্থান দখল করবে এবং উদ্দীপকের স্বল্পতা দূরীভূত হবে।

২। অজ্ঞাত পরিচয় প্রাকৃতিক রোগবিষসমূহকে প্রচলিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সনাক্ত না করতে পারার কারণে সুনির্দিষ্ট উদ্দীপিতকরণ পদ্ধতির ব্যবহার করতে না পারা :

মানবদেহের অসংখ্য অসংক্রামক রোগসমূহের উত্পাদক রোগবিষ  সমূহকে সনাক্ত না করতে পারার জন্য সুনির্দিষ্ট উদ্দীপক সমূহকে নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বিজ্ঞানীরা বিসিজি টিকার বিষ, ইন্টারফেরন, ইন্টারলিউকেন ইত্যাদি অনির্দিষ্ট উদ্দীপক ব্যবহার করার চেষ্টা করে সুনির্দিষ্ট ফল লাভ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কারণ দেহের রোগ প্রতিরোধ বাহিনীকে উদ্দীপিত করলেই মূল লক্ষ্য অর্জিত হবে না, তাদেরকে অজ্ঞাত পরিচয় রোগবিষকে সনাক্ত করার মত ক্ষমতা অর্জনের জন্য অজ্ঞাত পরিচয় রোগবিষের সমচরিত্র বিশিষ্ট উদ্দীপকের দ্বারা উদ্দীপিত হতে হবে ।
রোগপ্রতিরোধ শক্তিকে উদ্দীপিতকরণ ‘ হচ্ছে অনেকটা পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দানের মত কাজ। সমাজের অগণিত নির্দোষ মানুষের মধ্য থেকে অল্প সংখ্যক দোষী মানুষকে সনাক্ত করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে দোষী মানুষের নমুনার সাহায্যে প্রশিক্ষণ দিতে হয়। উদ্দীপক হচ্ছে এমনই একটি নমুনা যাকে রোগ প্রতিরোধ বাহিনীর সামনে উপস্থাপিত করলে তবেই রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর সদস্যরা উদ্দীপককে শত্রু হিসাবে সনাক্ত করে এবং উদ্দীপিত হয়ে উদ্দীপক এবং উদ্দীপকের সমচরিত্র বিশিষ্ট অজ্ঞাত রোগবিষসমূহকে ধ্বংস করার কাজটি সম্পাদন করতে সক্ষম হয়।ভেষজ চিকিত্সা পদ্ধতিকে ওরাল ইমিউনোথেরাপির স্থলাভিষিক্ত করার পথে প্রধান বাধা হতে পারে একটি প্রশ্ন—আরোগ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত মুখে খাওয়ানো ভেষজ ও ইনজেকশনের দ্বারা দেহে প্রবিষ্ট উদ্দীপক একই মানের কিনা? অর্থাত মূখে খাইয়ে ভেষজ প্রয়োগ করলে পরিপাক ক্রিয়ার দ্বারা পরিবর্তিত হয়ে তা যখন দেহে গৃহীত হয়, তখন সেই পরিবর্তিত ভেষজের দ্বারা সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া রক্ত প্রবাহে সরাসরি মিশ্রিত উদ্দীপকের দ্বারা সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া একই মানের কিনা?
এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হচ্ছে এই যে, যক্ষ্মা রোগের জীবাণু যে কোন পথে রক্তে প্রবেশ করলে যক্ষ্মা রোগ সৃষ্টি করে থাকে, সেই জীবাণুর মৃতপ্রায় দেহ উত্তেজক হিসাবে টীকার বেলায় যক্ষ্মারোগ প্রতিরোধ করে থাকে আবার ক্যান্সার রোগও আরোগ্য করে থাকে। অর্থাত সুস্থ দেহে রোগ উত্পাদন এবং অসুস্থ দেহে রোগের আরোগ্য সাধন-এ দুটো ধর্ম যার মধ্যে রয়েছে, সেই হবে উদ্দীপক। হোক না প্রয়োগের পদ্ধতি ভিন্নতর।
যেহেতু ধূতরা বিষের ন্যায় অসংখ্য পরীক্ষিত ভেষজ সুস্থ মানবদেহে রোগ উত্পাদন করতে পারে এবং অসুস্থ দেহের রোগ আরোগ্য করতে পারে, সেহেতু মুখে খাওয়ানো ভেষজকেও উদ্দীপক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস। যেমন কার্যকর বলে প্রমাণিত হওয়ায় একদা প্রচলিত ইনজেকশনের পরিবর্তে পোলিও টিকার মুখে খাওয়ানোর পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত বলে স্বীকৃতি পেতে বাধার সম্মুখীন হয়নি।
শুধুমাত্র আয়ুর্বেদ, ইউনানী এবং হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা পদ্ধতিই নয়, আকুপাংচার পদ্ধতিতে ব্যবহৃত সুঁচ দ্বারা চিকিত্সার কার্যকারিতাকে ইমিউনোলজির জ্ঞানের আলোকে বিচার করে দেখতে হবে। দেহে প্রবিষ্ট সূঁচ হচ্ছে দেহের জন্য একটি বিজাতীয় পদার্থ। এই বহিরাগত সুঁচকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে রোগ প্রতিরোধ বাহিনীর মাঝে সৃষ্ট উদ্দীপনা হয়তো দেহস্থ রোগবিষকে ধ্বংস করে রোগকষ্ট নিরাময় করে থাকে। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা জন্তুর দেহে ফোঁটানো সূঁচের চারদিকে শ্বেতকণিকার মাঝে এরকম উদ্দীপনা প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হয়েছেন। আকুপাংচার পদ্ধতিতে আরোগ্য প্রক্রিয়াকে আমরা অনির্দিষ্ট উদ্দীপক এর সাহায্যে আরোগ্য সাধন প্রক্রিয়া বলে অখ্যায়িত করতে পারি কিনা তাও ভেবে দেখা দরকার।
গ্রাম বাংলায় প্রচলিত ‘গুল দেওয়া’ পদ্ধতিও সম্ভবত এহেন একটি প্রক্রিয়া। গুল দেওয়া পদ্ধতিতে একটি সমৃণ কাষ্ঠখন্ডকে পায়ের মাংসপেশীতে ছিদ্র করে প্রবিষ্ট করে রাখা হয়,যেখানে ক্রমাগত একটি বেদনাহীন প্রদাহ চলতে থাকে। এর ফলে বাত, গ্যাষ্ট্রিক আলসার ইত্যাদির উপশম হয় বলে জানা যায়। এই পদ্ধতির সঙ্গে উপরোক্ত আকুপাংচার পদ্ধতির একটি মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানের এমন একটি সমস্যা জর্জরিত অবস্থায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন না করে একটি বিকল্প প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা যদি ওরস্যালাইনের মত একটা সহজলভ্য পদ্ধতিকে চিকিত্সা বিজ্ঞানীদের সামনে উপস্থাপন করতে পারি, তাহলে সম্ভবত সাময়িকভাবে হলেও বর্তমান প্রতিবন্ধকতাকে অপসারণ করে এগিয়ে যাবার একটি পথের দিশা উন্মোচিত হতে পারে।
যে লবণ ও পানির মিশ্রণকে ইনজেকশন ব্যতীত মূখে খাওয়ালে দেহ সহজে গ্রহণ করতে চাইত না, সেই মিশ্রণে সামান্য চিনি মিশিয়ে সুস্বাদু করে দিলে দেহ তা বিনা বাধায় গ্রহণ করে থাকে। এই সামান্য আবিস্কারটুকু ডায়ারিয়ার চিকিত্সায় বিপ্লব ঘটিয়েছে। ঠিক তেমনি কঠোর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির পরিবর্তে লক্ষণ সাদৃশ্যের দ্বারা উদ্দীপক নির্বাচন এবং ইনজেকশনের পরিবর্তে মৌখিকভাবে উদ্দীপক প্রয়োগ করে রোগপ্রতিরোধ শক্তির উদ্দীপিতকরণ দ্বারা আরোগ্য সাধন পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দান করে এর ব্যাপক ব্যবহার চালু করলে হয়তো তেমনি একটা বিপ্লব ঘটতে পারে।
এ যাবত আমরা উদ্দীপকের সাহায্যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর যে পদ্ধতির কথা বর্ণনা করেছি তার কাজ হলো দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার রসগত বা হিউমরাল এবং কোষগত বা সেলুলার ক্ষেত্রে কার্যকর বি-সেল ও টি-সেল সমুহকে উদ্দীপিত করা । এই প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা রয়েছে । যে শ্বেতকণিকা জন্মগত দুর্বলতা নিয়েই মজ্জা থেকে জন্ম নিয়েছে, তাকে উদ্দীপিত করলেও আশানুরূপ সাফল্য আসবেনা। শক্তিশালী শত্রু বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করার জন্য চাই শক্তিশালী রক্ষী বাহিনী, যার জন্ম দিবার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী মজ্জা বা বোনম্যারো। আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে , মজ্জাকে শক্তিশালী করা বা বোনম্যারো ষ্টিমুলেশন এর উপযুক্ত কোন উপাদানকেই আজ পর্যন্ত সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি । অথচ বিজ্ঞানীরা মজ্জার শক্তি কমানো বা বোনম্যারো সাপ্রেশন এর উপাদান আবিষ্কার করে ফেলেছেন এবং এর ব্যাপক ব্যবহারও হচ্ছে ।
উদাহরণস্বরূপ, দেহকে রোগবিষ থেকে মুক্ত করতে গেলে যে কষ্ট হয় তার চাইতে দেহকে রোগকষ্ট মুক্ত করে রাখতে পারলে আপাততঃ মানুষ শান্তি পায় এবং অত্যধিক রোগকষ্ট জনিত মৃত্তুর হাত থেকেও বেঁচে যায়। প্রকৃতপক্ষে জ্বর, ব্যাথা, এ্যালার্জি, পাতলা পায়খানা, ঘর্মে অতিরিক্ত দূর্গন্ধ হওয়া ইত্যাদি রোগ লক্ষণগুলো দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনীকে উদ্দীপিত করে বহিরাগত শত্রুকে আক্রমণ করার এবং দেহকে রোগবিষ থেকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় কতগুলো প্রক্রিয়ামাত্র । কিন্তু এগুলোর আধিক্যই অনেক সময় মানুষের সহ্য সীমার বাহিরে গেলে মানুষকে মৃত্তুর দিকে ঠেলে দেয় ।
এছাড়া একজনের দেহের কিডনি ইত্যাদি অঙ্গ নষ্ট হলে অন্য সুস্থ ব্যক্তির অঙ্গ কেটে সংযোজন করা হয় যাকে অঙ্গ সংস্থাপন বা ট্রান্সপ্লানটেশন বলে । দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনী এধরনের কাজকে বাধা দেয় এবং একজনের দেহে অন্য একজনের দেহের যন্ত্রকে ধবংস করে ফেলে । রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর এহেন আপন বা সেলফ এবং পর বা নন-সেলফ সম্বন্ধে জ্ঞান থাকার কারণেই এমনটি ঘটে থাকে । ডায়াবিটিস, এসএলই, বন্ধাত্ব্য ইত্যাদি কতিপয় অটোইমিউন রোগের বেলায় রোগপ্রতিরোধ বাহিনী উপরোক্ত আপন-পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং দেহের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সমুহকে ধবংস করতে শুরু করে । এহেন ক্ষতিকর কাজকে দমন না করলে রোগীর প্রাণহানি ঘটে থাকে। এছাড়া ক্যান্সার রোগের বেলায় এক্সরে জাতীয় তেজষ্ক্রিয় বিকীরণ এবং কেমোথেরাপি দ্বারা মজ্জাকে অকার্যকর করে রাখা হয় ।
উপরোক্ত রোগের তীব্রতা কমানো, অঙ্গসংস্থাপন এবং অটোইমিউন ও ক্যান্সার রোগ দমনের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানীরা অস্থিমজ্জার শক্তি কমানো বা বোনম্যারো সাপ্রেশন এর জন্য ওরাডেক্সন, প্রেডনিসোলন ইত্যাদি ষ্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করে থাকেন। এসকল জীবনরক্ষাকারী ঔষধ দীর্ঘদিন সেবন করলে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অবদমিত হয় যার নাম ইমিউনোকমপ্রোমাইজড বা রোগের সঙ্গে আপোষমুলক অবস্থা । এহেন অবস্থায় মানুষ অতিসহজেই রোগজীবাণু কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে থাকে । শুধুমাত্র ষ্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করলেই যে এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয় তা নয় , রোগকষ্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত শক্তিশালী এ্যান্টিবায়োটিক, এ্যালার্জি নাশক , বেদনা নাশক , বমি ও পাতলা পায়খানা রোধক ইত্যাদি ঔষধের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানব দেহ রোগবিষের সাথে লড়াইয়ের প্রবণতা হারিয়ে আপোষ করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে । এমনি অবস্থায় শক্তিশালী বার্ডফ্লু ভাইরাস, ম্যাডকাউ নামক রোগের ভাইরাস দ্বারা মানুষ আক্রান্ত পড়ে , যেসকল ভাইরাস ইমিউনোকম্পিটেন্ট বা শক্তিশালী রো্গপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের শরীরে কোনদিন প্রবেশ করার সুযোগ পায়নি । আসলে খামারে কৃত্রিম ও ঔষধ নির্ভর পরিবেশে পালিত জীবজন্তুর ইমিউনোকম্প্রোমাইজড অবস্থাই সাহায্য করে উপরোক্ত ভাইরাস গুলোকে দেহে প্রবেশ করতে যারা পরবর্তীকালে মানুষের দেহে প্রবেশ করে ।

চিকিত্সা বিজ্ঞানের প্রতিবন্ধকতা দুরীকরণে হোমিও প্রযুক্তির ব্যবহার

(২১ ফেব্রুয়ারী ২০০৬ সালে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত)

ইমিউনোলজি হচ্ছে আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানের একটি শাখা। ইমিউনোলজি বিজ্ঞানের অন্যতম সফল আবিষ্কার হচ্ছে টিকাদান পদ্ধতি যা ১০০% সফল বলে স্বীকৃত এবং প্রমাণিত । এই বিজ্ঞানের মতে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিষ্টেমের শক্তি বৃদ্ধিকরণই হচ্ছে দেহের রোগমুক্ত থাকার সঠিক এবং স্থায়ী পথ। এই প্রক্রিয়ার নাম হচ্ছে ইমিউনোপোটেনসিয়েশন বা ইমিউনোমডুলেশন। ক্যান্সার গবেষণার ফলে ইমিউনোলজি বিজ্ঞান ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে। দেহের রোগগ্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিষ্টেমকে সঠিক ভাবে পরিচালিত করে দেহে বিদ্যমান রোগ উত্পাদনকারী বিষ বা এ্যান্টিজেন সমূহকে শ্বেতকণিকার সাহায্যে ধ্বংস করানোর জন্য বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন ইন্টারফেরন এবং ইন্টারলিউকিন নামক উপাদান যাকে এক কথায় সাইটোকাইন নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এই আবিস্কার চিকিত্সা বিজ্ঞানীদিগকে রোগ নিরাময়ের বিষয়ে অত্যন্ত আশাবাদী করে তুলেছিল। কিন্তু কার্যতঃ এই প্রচেষ্টা আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ায় মানবজাতি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যার সংবাদ সাধারণ মানুষ জানেন না।

টিকার মত ১০০ % সফল একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত পদ্ধতিকে সর্বপ্রকার রোগের বেলায় কার্যকর করার পদ্ধতি সফল হলে চিকিত্সা বিজ্ঞান মানবজাতির জন্য একটি রোগমুক্ত বিশ্ব উপহার দিতে পারতো। ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা, ক্যান্সার, এইডসের মত ক্রমবর্ধমান রোগের প্রকৃত কারণকে বিজ্ঞানের ভাষায় ইমিউনোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার বিশৃঙ্খলা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যার প্রকৃত আরোগ্যপদ্ধতি বিজ্ঞানীদের নাগালের মধ্যে এসেও কতিপয় কারণের জন্য হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় বিজ্ঞানীরা বাধ্য হয়েছেন মানব জাতিকে আরোগ্য অসম্ভব বা ইনকিউরেবল রোগের তীব্রতা থেকে বাঁচানোর জন্য সাময়িক উপশম বা প্যালিয়েশন এবং অবদমন বা ইমিউনোসাপ্রেশন এর পথ অবলম্বন করতে। আযূর্বেদ , ইউনানী এবং হোমিওপ্যাথির মত প্রাকৃতির চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা মানবজাতি তথা এ্যালোপ্যাথি বিজ্ঞানের এই দুর্দিনে নীরব দর্শকের ভূমিকা অবলম্বন করে বসে আছেন, কেবলমাত্র তাদের প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে। অথচ ঐ সকল প্রাকৃতিক চিকিত্সা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ভেষজ সমূহের ভিতর এমন কতগুলো উপাদান রয়েছে যা এ্যালোপ্যাথি বিজ্ঞানের ইমিউনোমডুলেশনের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারে ইন্টারফেরণ ও ইন্টারলিউকিনের মত সাইটোকাইনের দ্বারা সৃষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না করে। দেহের বাইরে কৃত্রিমভাবে তৈরী সাইটোকাইনের ব্যবহারের চাইতে ভেষজের সাহায্যে উত্তেজিত করে ইমিউনোষ্টিমুলেশন প্রক্রিয়ার সাহায্যে শ্বেতকণিকা বা ইমিউন সিষ্টেমের নিজ উদ্যোগে পরিমাণ মত সাইটোকাইন তৈরী করানোর পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়েই সম্ভবতঃ এতদিন মানুষ কুষ্ঠ, হাপানি, ডায়াবেটিস, সোরায়সিস, ইত্যাদি অটোইমিউনিটি, ইমিউন ডিফিশিয়েন্সি এবং ইমিউন কমপ্লেক্স রিএ্যাকশন জনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারছিল যার পিছনে নিহিত ভেষজের সাফল্যের প্রকৃত বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা প্রাচীনপন্থী চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা ইমিউনোলজির জ্ঞানের অভাবে আজও অবগত হতে পারছেন না। শিকলে আবদ্ধ মহাশক্তিধর হস্তি যেমন তার নিজস্ব ক্ষমতা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল না থাকার কারণে শিকলের দুর্বল বন্ধনের কাছে নতিস্কীকার করে থাকে তেমনি প্রাচীনপন্থী চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা তাদের দীর্ঘদিন যাবত উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও রক্তশূন্যতা রোগে ব্যবহৃত ভিংকা রোজিয়া বা নয়নতারার মত প্রাকৃতিক ভেষজের ভিতর লুকানো ভিনক্রিষ্টিন ও ভিনব্লাষ্টিনের মত ব্লাডক্যান্সার আরোগ্যকারী এ্যালক্যালয়েডের সুসংবাদ না জানারা কারণে তাদের প্রচীন পরীক্ষালব্ধ (এমপিরিক্যাল) পদ্ধতির বিষয়ে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন । অন্যদিকে হোমিওপ্যাথরা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির দ্বারা রোগের মূল কারণ ইমিউনোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারকে দুর না করে শুধুমাত্র কতিপয় লক্ষণকে দূর করে আর সব চিকিত্সা বিজ্ঞানের মতই কেবলমাত্র সাময়িক উপশমকারী (প্যালিয়েটিভ) চিকিত্সা দিয়ে আসছেন। আজ মানবজাতির এই দুর্দিনে প্রয়োজন আয়ুর্বেদ, ইউনানী ও হোমিওপ্যাথির অনুসারীদের ইমিউনোলজি তথা আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানের প্রকৃত জ্ঞানকে কাজে লাগানো । সেই উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক ভেষজের ব্যবহারকে শুধু রোগকষ্ট উপশমকারী বা প্যালিয়েটিভ পর্য্যায়ে সীমাবদ্ধ না রেখে উচিত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিষ্টেমের উত্পত্তিস্থল অস্থির দ্বারা আবৃত মজ্জাকে শক্তিশালীকরণ বা বোনম্যারো ষ্টিমুলেশন এর পদ্ধতিকে কার্যকর করে সুস্থ ও সবল রক্তকণিকা তৈরীর উপযোগী ইউরেনিয়াম এবং রেডিয়াম ধাতুর সুক্ষ্মমাত্রায় তৈরী হোমিও ঔষধের সাহায্য গ্রহণ করা । ভেষজ উপাদান কিংবা টীকায় ব্যবহৃত জীবাণুর মৃতদেহের মত এ্যাডজুভেন্ট বা সাহায্যকারীর চাইতে শক্তিশালী ভেজষ্ক্রিয় পদার্থের রোগ উত্পাদক শক্তিকে ব্যবহার করে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার নিষ্ক্রীয় থাকার জন্য দায়ী ইমিউন টলারেন্সকে ভেঙ্গে দিতে পারলেই সম্ভব হবে এইচ, এল, এ বা হিউম্যান লিউকোসাইট এ্যান্টিজেনের আড়ালে লুকানো রোগ সৃষ্টিকারী এ্যান্টিজেন বা রোগবিষ সমূহকে বিনা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দেহ থেকে বিতাড়িত করা, অন্যথায় জীন গবেষণা যতই উন্নত হোক না কেন, জন্মগতভাবে প্রাপ্ত বা জেনটিক্যালি ইনহেরিটেড বিষাক্ত জিন বা এইচ, এল, এ’র প্রভাব থেকে মানবজাতি কোন দিনই সহজে মুক্তি পাবেনা।

সঠিক চিকিত্সার সন্ধানে

(ভোরের কাগজ পত্রিকায় ৯ জুন ২০০২ সালে পরামর্শ বিভাগে প্রকাশিত)

বিজ্ঞানের আর সব শাখার চাইতে চিকিত্সা বিজ্ঞানের নীতিমালা একেবার ভিন্নতর । চিকিত্সা বিজ্ঞানে রয়েছে নানাবিধ মতবাদ। ফলে সাধারণ মানুষ পড়েছে বিপদে। চোখ কান বুজে কোন একটি পথকে আঁকড়ে ধরতে পারছেনা রোগগ্রস্থ মানুষ। ধর্মীয় মতবাদের মত নানা মতবাদ রোগাক্রান্ত মানুষকে বিচলিত করে তোলে। সঠিক পথ বেছে নেবার কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার কারণে তাকে অসহায়ের মত এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রতিটি মানুষ। এমনকি চিকিত্সকদেরকেও দেখা যায় তার নিজ মত ও পথ পরিত্যাগ করে জীবনের আশায় ভিন্ন মতাবলম্বী চিকিত্সকের নিকট সাহায্য প্রার্থী হতে। বিজ্ঞানীদের কাছে এটা বড়ই বিড়ম্বনার বিষয় নিঃসন্দেহে । আজ আমরা চেষ্টা করব চিকিত্সা বিজ্ঞানের এমন একটি সঠিক পথ খুঁজে বের করতে যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। চিকিত্সা বিজ্ঞানের এমন একটি পথ রয়েছে যা আংশিক ভাবে ব্যবহৃত হয়েও সামান্য কিছু বাধার কারণে সর্বরোগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হচ্ছেনা। চিকিত্সা বিজ্ঞানের এই শাখাটির নাম হচ্ছে ইমিউনোলজি বা রোগ প্রতিরোধ বিদ্যা। এ্যালোপ্যাথি নামে পরিচিত আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানের একটি শাখা হচ্ছে এটি । এই বিদ্যারই অবদান হচ্ছে টিকাদান পদ্ধতি যা কেবলমাত্র সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু অসংক্রামক অসংখ্য রোগ যথা, বাত, মাথাব্যাথা (মাইগ্রেন), উচ্চরক্তচাপ, গ্যাষ্ট্রিক-আলসার, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, ইত্যাদির বেলায় এই বিদ্যা কোন ভূমিকা রাখতে পারছেনা কেন সেইটাই আমরা আজ জানতে চেষ্টা করব।রোগ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার এর প্রধান শর্তই হচ্ছে রোগের কারণ সনাক্ত করা। সংক্রামক রোগসমূহের কারণ জীবানু বা ভাইরাসগুলোকে সনাক্ত করে সেগুলোকে মানব দেহের বাইরে কৃত্রিমভাবে অথবা অন্যকোন প্রাণীরদেহে কালচার বা চাষ করার উপায় বের করা গিয়েছে বলেই সেই সব সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে টীকার সাহায্যে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিকের সাহায্যে আরোগ্য সাধন করাও সম্ভব হচ্ছে। অসংক্রামক সব রোগের উত্পাদক কারণ জীবানু বা ভাইরাস এর মত জীবন্ত নয় বলে সেগুলোকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, তাই সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বা প্রতিকার করা সম্ভব হয়নি এবং হচ্ছেনা। কেবলমাত্র রোগকষ্টকে কমিয়ে রাখার পদ্ধতিকে একমাত্র গ্রহণযোগ্য চিকিত্সা বলে স্থির করা হয়েছে । মাথাব্যাথা, বাত, প্যারালাইসিস, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি অসংক্রামক সব রোগেরা বেলায় কেবলমাত্র রোগকষ্টকে উপশম করে রোগীর জীবনকালকে দীর্ঘায়িত রাখার পদ্ধতিকেই বর্তমানে একমাত্র প্রচলিত চিকিত্সা পদ্ধতি হিসাবে নির্ধারিত করা হয়েছে।

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, অসংক্রামক রোগের বেলায় রোগের কারণকে সনাক্ত না করতে পারার কারণেই চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা মানব দেহের রোগকষ্টকে কেবলমাত্র কমিয়ে রেখে মানুষকে বাচিয়ে রাখার পদ্ধতিকে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। রোগের কারণকে নির্মূল করে সমূলে রোগনিরাময় করার পথকে উদ্ঘাটন করতে না পেরেই বিজ্ঞানীরা রোগের কারণগুলোকে দেহের মধ্যে জিইয়ে রেখে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ক্রমাগত ঔষধ সেবন করে এহেন রোগকষ্ট উপশম করে রাখার ফলে মানবদেহে রোগের কারণ রোগবিষগুলো দিনদিন তীব্রতর হচ্ছে এবং পরিণামে রোগ কষ্ট নিবারক ঔষধগুলো কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ক্রামগত রোগকষ্ট উপশমকারী ঔষধ সেবনের ফলে মানব দেহের কোনকোন যন্ত্রের গোলযোগ দেখা দিচ্ছে এবং যন্ত্রগুলো বিকল হয়ে বা বিকৃত হয়ে পড়ছে। তখন সেই সকল যন্ত্রকে শল্য চিকিত্সার দ্বারা কেটে বাদ দিয়ে রোগীকে রোগকষ্ট থেকে মুক্ত করা হচ্ছে ।

এরপরও যদি দেহের কষ্টের উপশম না হয় তখন বিজ্ঞানীরা দেহের প্রতিরোধক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমকে অকেজো করে রাখার মত ইমিউনোসাপ্রেসিভ (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অবদমনকারী) ড্রাগ আবিস্কার করেছেন ।যার প্রয়োগের ফলে দেহ বিষমুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা থেকে নিবৃত্ত থেকে রোগকষ্ট থেকে দেহকে মুক্ত রাখছে। এই হচ্ছে আধুনিক চিকিত্সার এযাবতকালের সর্বশেষ প্রক্রিয়া ।

অন্যদিকে প্রাকৃতিক চিকিত্সা পদ্ধতি মানব দেহকে বিষমুক্ত করার প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে দেহকে বিষমুক্ত রাখার পথ বেছে নিয়েছে। যার ফলে দেহে বিষের আধিক্য হ্রাস পাচ্ছে এবং রোগের জটিলতা কমছে । ফলে শল্য চিকিত্সা কিংবা ইমিউনোসাপ্রেসিভ চিকিত্সার প্রয়োজন ত্বরান্বিত হচেছনা বা একেবারে ব্যবহার না করেই অনেক রোগী জীবন কাটিয়ে দিতে পারছেন।

প্রাকৃতিক চিকিত্সা পদ্ধতি কিভাবে দেহকে বিষমুক্ত রাখার কাজটি করছে সেই প্রক্রিয়াটির প্রমাণ দিয়ে গিয়েছেন বিজ্ঞানী জে,টি, ফ্রয়েড ১৯৪২ সালে। ইঁদুরের দেহে যক্ষ্মা রোগের জীবানুসহ কিছু বিজাতীয় রাসায়নিক পদার্থ ইনজেকশনের দ্বারা প্রবেশ করিয়ে তিনি ইঁদুরের দেহের ক্যান্সার জনিত টিউমার উধাও করে দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে বিজাতীয় উদ্দীপক পদার্থ প্রবেশ করালে দেহের ঘুমন্ত ইমিউন সিস্টেমের দেহরক্ষী বাহিনী ঘুম ভেঙ্গে উদ্দীপিত হয়ে উঠে এবং দেহকে বিষমুক্ত তথা রোগমুক্ত করে ফেলে।

তার এই অনবদ্য আবিষ্কারকে বিজ্ঞানীরা কাজে লাগাতে সক্ষম হননি কেবলমাত্র ইনজেকশনের দ্বারা প্রয়োগ করার মত উপযুক্ত উদ্দীপক এর স্বল্পতার কারণে। অধুনা ব্যবহৃত ইন্টারফেরণ ও ইন্টারলিউকিনের মত অনির্দিষ্ট উদ্দীপক এর দ্বারা সুনির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না । বরং কোন কোন ক্ষেত্রে বেশীমাত্রায় (তিন লক্ষ ইউনিট) ঔষধ প্রয়োগের ফলে এর কাজ প্রতিরোধ শক্তিকে উদ্দীপিত না করে বরং অবদমিত করে ফেলে, যার ফল অনেক সময় প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়।

প্রাকৃতিক চিকিত্সায় ইনজেকশনের দ্বারা প্রয়োগের উপযুক্ত উদ্দীপকের পরিবর্তে মুখে খাওয়ানোর উপযোগী ভেষজের দ্বারা দেহের অজ্ঞাতপরিচয় বিষ থেকে মুক্ত রাখা হচ্ছে। ফ্রয়েন্ডের আবিস্কৃত উদ্দীপিতকরন প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে দেহের বিবিধ কষ্টদায়ক রোগলক্ষণ কমিয়ে রাখার দ্বারা দেহের ক্ষতিকে কমানো হচ্ছে প্রাকৃতিক চিকিত্সার দ্বারা। যেমন মেথী, মেষশৃঙ্গী, তেলাকুচা, জামের বিচির রস, করলার রস দ্বারা ডায়াবেটিসের তীব্রতাকে কমানো হচ্ছে।

বিজ্ঞানী ফ্রয়েন্ডের চিকিত্সা পদ্ধতির সদৃশ একটি অতি প্রাচীন ঔষধ প্রয়োগবিধি আমরা দেখতে পাই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে যেখানে সুস্থ ব্যক্তির দেহে উন্মাদনা সৃষ্টিকারী ভেষজ ধুতরাকে ব্যবহার করে উন্মাদ রোগীকে আরোগ্য করা হয়।

মৌখিক প্রয়োগের দ্বারা এই উদ্দীপিতকরন পদ্ধতির আরো নিয়মতান্ত্রিক প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই হোমিওপ্যাথিতে, যেখানে ম্যালেরিয়া সদৃশ জ্বর উত্পাদনকারী কুইনাইন ব্যবহার করে ম্যালেরিয়া জ্বর নাশ করা হয় কিংবা বমির লক্ষণ উত্পাদনকারী ইপিকাক নামক ভেষজ দ্বারা বমির লক্ষণকে দুর করা হয় অথবা পাতলা পায়খানা সৃষ্টিকারী ভেষজ পডোফাইলাম দিয়ে পাতলা পায়খানা নিবারণ করা হয়। তেমনি সুস্থ দেহে রোগ উত্পাদনকারী অসংখ্য ভেষজকে ব্যবহার করে সমলক্ষন বিশিষ্ট রোগকে নিরাময় করা হয়।

এসব আরোগ্য প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা দিতে তখনকার প্রাকৃতিক চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা অক্ষম হলেও আজ আমরা এর ব্যাখ্যা খুঁজে পাই ফ্রয়েন্ডের চিকিত্সা পদ্ধতিতে, যার যথাযত ব্যবহারা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা কেবলমাত্র ইনজেকশন দ্বারা প্রয়োগের পদ্ধতিকে আকড়ে থাকার কারণে । ইনজেকশনের বদলে মুখে খাইয়ে স্যালাইন প্রয়োগ করে, কিংবা পোলিও টিকা মুখে খাইয়ে যে ফল পাওয়া গিয়েছে, একই ফল যেহেতু প্রাকৃতিক চিকিত্সায় ভেষজবিষকে সমলক্ষণের ভিত্তিতে মুখে খাইয়ে পাওয়া যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে বিষাক্ত বিজাতীয় ভেষজকে ইনজেকশনের দ্বারা প্রয়োগের বাধা অতিক্রম করা সম্ভব হতে পারে, যা মানব জাতির জন্য কম খরচে এবং বিনা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ওরস্যালাইনেরা মত বিপুল কল্যাণ সাধন করতে সক্ষম হবে।তাহলে কথা দাঁড়াচ্ছে এই যে, রোগের আরোগ্যের একটাই সঠিক উপায় রয়েছে আর তা হচ্ছে ” সুনির্দিষ্ট উদ্দীপকের দ্বারা রোগপ্রতিরোধ শক্তিকে উদ্দীপিত করে দেহকে রোগবিষ থেকে মুক্ত করে আরোগ্য সাধন “। যে চিকিত্সা পদ্ধতি একাজটি সঠিক ভাবে করতে পারবে তাকেই গ্রহণযোগ্য বলে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বাকী সব পদ্ধতিকে বর্জন করতে হবে ।ফলে থাকবেনা বিভিন্ন প্যাথির অন্তর্দ্বন্দ। প্রয়োজন পড়বেনা রোগকষ্ট উপশমকারী এবং রোগপ্রতিরোধক্ষমতা অবদমনকারী চিকিত্সা পদ্ধতির দ্বারা মানবদেহেরা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিসাধনের ।

হোমিও ওষুধ “সল” নিয়ে নতুন ধরনের পরীক্ষা চলছে

(এই প্রবন্ধটি মাসিক গণস্বাস্থ্য ম্যাগাজিনে জুলাই ২০০৬ প্রকাশিত হয়)

অনাক্রম্য বৈকল্য বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার বিশৃঙ্খলা জনিত রোগব্যাধি নিরাময়ের জন্য সৌর রশ্মির বিকিরণ শক্তি দ্বারা সমৃদ্ধ ইথাইল এ্যালকোহল দিয়ে তৈরী হোমিও ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চলছে । ১৮৮০ সালে আমেরিকার হোমিও বিজ্ঞানী ডাঃ বার্নার্ড ফিঙ্ক কর্তৃক আবিষ্কৃত “সল” নামক এই ওষুধটি মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে নিম্নলিখিত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার বিশৃঙ্খলাজনিত রোগসমূহের ক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রম ধর্মী নিরাময় ক্ষমতা প্রদর্শন করছে যা অদ্যাবধি প্রচলিত হোমিওপ্যাথিক চিকিত্সা দ্বারা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এই নব উদ্ভাবিত হোমিওপ্যাথিক ইমিউনোমডুলেশন পদ্ধতিতে অনাক্রম্য স্বল্পতা,স্ব-অনাক্রম্যতা, অতিসংবেদনশীলতা, দেহ কোষ ধবংসকারী প্রতিক্রিয়া, অনাক্রম্য জটিলতা ইত্যাদি প্রতিক্রিয়ার দ্বারা সৃষ্ট রোগসমূহের চিকিত্সা করা যাবে।

নতুন উদ্ধাবিত এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অন্যান্য হোমিওপ্যাথিক ওষুধের সঙ্গে “সল” ওষুধটি ব্যবহার করে অনাক্রম্য বৈকল্য বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার বিশৃঙ্খালজনিত একগুয়ে ও কঠিন যে সকল রোগব্যাধি নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে প্রমানিত হয়েছে, সে সকল রোগের মধ্যে রয়েছে অস্থি সচ্ছিদ্রতা, বার্জার্স ডিজিজ, সোরাইসিস, সোরাইসিস এবং বাতজনিত অর্থ্রাইটিস, এ্যাংকাইলোজীং স্পন্ডিলাইটিস, পার্কিনসন্স ডিজিজ, ব্রংকিয়াল এ্যাজমা, মেডুলোব্লাসটোমা, একজিমা, এপ্লাষ্টিক এনিমিয়া , কিডনি প্রদাহ, হজমের গোলমাল,   ডায়াবিটিক নিউরোপ্যাথি, রেটিনোপ্যাথী, নেফ্রোপ্যাথি, গ্যাংগ্রিন, হেমোরোজিক সিনড্রোম , পারপিউরা, ওয়ার্টস, বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, রোগের সহিত প্রতিরোধ ক্ষমতার আপোষমূলক অবস্থা, ক্যাচেক্সিয়া, সাবফাটিলিটি, পুরুষ ও মহিলাদের জননেন্দ্রিয়ের রোগ, বাতজ্বর, লিউকিমিয়া, মৃগী, অগ্ন্যাশয়ের পুরাতন রোগ, ভাইরাল হেপাটাইটিস, হৃদসংবহন রোগ, যক্ষ্মা, বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারট্রফি, হজকিন্স লিমফোমা, এন্ডোক্রিন গ্রন্থির রোগ ইত্যাদি।

হোমিওপ্যাথিক ওষুধ “সল” দ্বারা হোমিওপ্যাথিক ইমিউনোমডুলেশন পদ্ধতির সাহায্যে চিকিত্সার জন্য পরিচালিত গবেষণার পিছনে কি উদ্দেশ্য ছিল?

আধুনিক ইমিউনোলজি বিজ্ঞান অনুসারে অনাক্রম্য পদ্ধতিকে দুই ভাবে নিয়ন্ত্রিত করা যায়, যথা : (১) অনাক্রম্য ক্ষমতায়ন এবং (২) অনাক্রম্য অবদমন । অনাক্রম্য বৈকল্যের কারণে ঘটিত রোগব্যাধি দুরীভুত করাই এর উদ্দেশ্য। অনাক্রম্য ক্ষমতায়ন এর ক্ষেত্রে উদ্দীপক নামক পদার্থ অনাক্রম্য পদ্ধতিকে উদ্দীপত্তকরণের কাজে ব্যবহৃত হয়। আরোগ্য অসম্ভব বা জটিল রোগ প্রক্রিয়া সৃষ্টি করার জন্য দায়ী বাহিরাগত রোগবিষ শনাক্তকরণ ও তা দুরীকরণের কাজে একে লাগানো হয়। ইন্টারফেন, ইন্টারলিউকিন প্রভৃতি অ-বিশেষিত উদ্দীপক  এর উদ্ভাবন সত্বেও অনাক্রম্য পদ্ধতির বিকাশকে সফল করা সম্ভব হয়নি। এর কারণ হচ্ছে মানবদেহের জন্য উপযোগী বিশেষ অনাক্রম্য উদ্দীপন সৃষ্টিকারী সুনির্দিষ্ট উদ্দীপক এর অভাব।

মানবদেহকে রোগবিষ জাতীয় পদার্থ থেকে মুক্ত করার একটা আদর্শ উপায় খুজতে ব্যর্থ হয়ে বিজ্ঞানীরা বিকল্প পথের দিকে ঝুকেছেন। তাঁরা এখন এ্যাগনিস্ট, এ্যান্টাগোনিষ্ট, ইনহিবিটর, চ্যানেল ব্লকার জাতীয় শক্তিশালী ওষুধের সাহায্য রোগের উপশম ঘটিয়ে রোগীর জীবনকে দীর্ঘায়িত করার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

এর চাইতেও আরোগ্য অসম্ভব রোগ নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানীরা ওরাডেক্সন, প্রেডনিসোলন, মেথটেরেক্সেট (এম টি এক্স) নামক স্টেরয়েড বা হরমন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে অনাক্রম্য অবদমন নামক দ্বিতীয় বিকল্প একটি পথ বেছে নিয়েছেন। এর লক্ষ্য অনাক্রম্য সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে বহিরাগত রোগবিষ জাতীয় পদার্থের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান ঘটাতে অনাক্রম্য পদ্ধতিকে রাজী করানো। এর ফলে অনাক্রম্য মীমাংসা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে মানবদেহ প্রাণধারী এবং প্রাণহীন রোগবিষসমুহের একটি স্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ বিচরণক্ষেত্রে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলে অস্থিমজ্জার অবদমন ঘটছে এবং ক্যান্সার প্রবনতা এবং স্বঅনাক্রম্যতা, অনাক্রম্য জটিলতা, দেহ কোষ ধবংসকারী প্রতিক্রিয়া, অতিসংবেদনশীলতা ইত্যাদি কারণজনিত অন্যান্য রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

ওষুধ নির্ভর এই জীবন আসলে কৃত্রিমভাবে লালিত খামারের পশুর জীবনের অনুরূপ। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র উপায় হচ্ছে অনাক্রম্য নিয়ন্ত্রণ এর সফল বাস্তবায়ন । এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন ছিল বিকল্প হোমিওপ্যাথিক ওষুধি ফমুর্লার মাধ্যমে একটি সঠিক উদ্দীপক উদ্ভাবন, যা দীর্ঘ গবেষণায় অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিশদ আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছে।

হোমিওপ্যাথিক ওষুধ “সল” এর সংশোধিত ফর্মূলার ফার্মাকোলজিক্যাল প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের ইতিহাস :

হোমিওপ্যাথিক ওষুধ তৈরীর ইতিহাস থেকে জানা যায় যে,ল্যাকটোজকে চুম্বক এবং বিদ্দুত এর ন্যায় অপরিমেয় শক্তির দ্বারা প্রভাবিত করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন করা সম্ভব। এর প্রবর্তন করেন হোমিওপ্যাথির জনক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান। হোমিওপ্যাথদের মধ্যে বিদ্দুত শক্তি এবং চুম্বক শক্তির দ্বারা ওষুধ প্রস্ততপ্রণালী বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে ।

১৮৮০ সালে ডাঃ বার্নার্ড ফিঙ্ক ল্যাকটোজকে সৌররশ্মি দ্বারা প্রভাবিত করে “সল” নামক ওষুধ তৈরী করেন । পরে সেই ওষুধ ব্যবহার করে তিনি ক্যান্সারসহ নানাবিধ জটিল রোগ আরোগ্য করেন। কিন্তু তার মৃত্তুর পর ঐ ওষুধ জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলে এবং ওষুধটি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায় এবং হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রস্ততকারীরা এর উত্পাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দেন ।

কিন্তু ১৮৯৭ সাল ডাঃ বার্নার্ড ফিঙ্ক ল্যাকটোজের পরিবর্তে ইথাইল এ্যালকোহলকে এক্স-রের দ্বারা বিকিরণ সমৃদ্ধ করে অপর একটি ওষুধ তৈরী করেন। তিনি ঐ ওষুধের নামকরণ করেণ এক্স-রে । ওষুধটি ব্যাপক ভিত্তিক নিরাময় ক্ষমতার জন্য হোমিওপ্যাথদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। অস্থিমজ্জার স্বল্পতা জনিত লিউকিমিয়া এবং অনাক্রম্য স্বল্পতা জনিত বিবিধ ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ নিরাময়ে এই ওষুধটি ভালো অবদান রাখতে সক্ষম হয়। সোরাইসিস, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি রোগের নিরাময়ে ওষুধটি উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখে। এক্স-রের   ন্যায় আর এমন কোন ওষুধ হোমিওপ্যাথিতে নেই, যা একসঙ্গে এতগুলো ক্যান্সার সদৃশ রোগ নিরাময়ে সক্ষম ।

কোন দ্রব্যের রোগ নিরাময় ক্ষমতা নিহিত থাকে এর রোগ সৃষ্টির শক্তির  উপর, যার অর্থ কোন দ্রব্যের বিষাক্ততা যত বেশী হবে, এর নিরাময় ক্ষমতাও ততই অধিক হবে। হোমিওপ্যাথির মূলমন্ত্র এটাই। হোমিওপ্যাথি বিজ্ঞান লঘুকৃত মাত্রায় কোন দ্রব্যের বিষাক্ততাকে মানবদেহে ঐ একই বিষাক্ততা থেকে উদ্ভুত রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করে থাকে। বিসিজি ভ্যাকসিনের লঘুকৃত মাত্রা এবং অন্যান্য কতিপয় ওষুধ কোন কোন ধরণের ক্যান্সার নিরাময় করতে সক্ষম হওয়ার পর ইমিউনোলজি বিজ্ঞান হোমিওপ্যাথির এই ধারণাকে সমর্থন দিয়েছে (বেসিক এন্ড ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজি, লেঞ্জ মেডিক্যাল পাবলিকেশনস, ৪র্থ সংস্করণ পৃষ্ঠা ২৮৯ দেখুন)।

আধুনিক এ্যালোপ্যাথিক চিকিত্সার থিওরী অনুসারে এক্স-রে, গামা রশ্মি এবং অতি বেগুনী রশ্মি অত্যন্ত বিষাক্ত এবং এগুলোর উঁচু মাত্রা ক্যান্সার সৃষ্টি করে। পৃথিবীর আর কোন কিছুই বিকিরণ শক্তির ন্যায় এতটা ফলপ্রসুভাবে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে না। আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানে এগুলোই ক্যান্সারের চিকিত্সায় নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

এসব বিষয় বিবেচনা করলে বলা যেতে পারে যে, এক্স-রে নামক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ যদি এতটা নিরাময় গুণসম্পন্ন হয় তাহলে সৌরশক্তি থেকে প্রাপ্ত অতিবেগুনী রশ্মিযুক্ত ওষুধ “সল”, যেটি এক্স-রের মতো ক্যান্সার সৃষ্টিকারী, নিশ্চয়ই সেটির ব্যবহার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত এবং অনেক বেশী নিরাময় ক্ষমতা সম্পন্ন হবে। এই ধারনা থেকেই সৌর বিকিরণ সম্পন্ন হোমিও ওষুধ নিয়ে পুনঃ পরীক্ষা চালানো হয়।আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হোমিও ফার্মাসিস্টদের কাছে “সল” না থাকায় ১৯৭৩ সালে ওষুধটি তৈরী করার জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। “সল” তৈরী করার ফার্মাকোলজিক্যাল প্রক্রিয়া একমাত্র এ ডিকশনারী অব প্র্যাকটিক্যাল মেটিরিয়া মেডিকা নামক গ্রন্থেই রয়েছে। এর লেখক ডা. জে, এইচ ক্লার্ক (জেইন পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ইন্ডিয়া)। বইটির ফার্মাকোলজিক্যাল নির্দেশনা অনুসারে যখন একটি ম্যাগনিফাইং কনভেক্স লেন্সের সাহায্যে ঘনীভুত সৌররশ্মিকে ল্যাকটোজ (সুগার অব মিল্ক নামে পরিচিত) এর উপর প্রয়োগ করা হয় তখন উত্তাপ বৃদ্ধির ফলে ল্যাকটোজ পুড়ে অঙ্গারে রূপান্তরিত হয়।

“সল”এর প্রস্তুত প্রণালী সম্পর্কে আরো কোন উন্নত পরামর্শ রয়েছে কিনা সে বিষয়ে বিশ্বের খ্যাতনামা হোমিও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাদের কাছে এ সম্পর্কিত কোন প্রযুক্তি নেই বলে জানানো হয়। এখানে উল্লেখ্য যে “সল” ওষুধটির চাহিদা হোমিও জগতে না থাকার কারণে এর উত্পাদন প্রায় এক শতাব্দি যাবত বন্ধ রয়েছে । অতঃপর ওষুধটি প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে পুস্তুকে বর্ণিত ডাঃ বার্নার্ড ফিঙ্ক এর ফার্মাকোলজিক্যাল প্রক্রিয়ার কিছু রদবদল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ লক্ষ্যে এ প্রক্রিয়ার তিন ধরনের রদবদল করা হয়, যথা-

১. বিকিরনের মাধ্যম হিসেবে ল্যাকটোজ এর বদলে ইথাইল এ্যালকোহল ব্যবহার করা। ইথাইল এ্যালকোহল একটি সমতা সম্পন্ন মাধ্যম। এক্ষেত্রে ইথাইল এ্যালকোহল সমানভাবে বিকিরিত শক্তি শোষন করবে এবং এর জন্য ডা: ফিঙ্ক এর পরামর্শ মত মাধ্যমকে সার্বক্ষনিকভাবে নাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।

২. ঘনীভুত সুর্যরশ্মির বদলে প্রাকৃতিক সৌরশক্তি ব্যবহার করা। এতে উত্তাপ বৃদ্ধির কারণে মাধ্যমটি উত্তপ্ত হয়ে পুড়ে যাবে না ।

৩। মাধ্যমকে বিকিরিত শক্তি দ্বারা সম্পৃক্ত করার প্রয়োজনীয়তা মেটাতে বিকিরণের সময়কাল বৃদ্ধি করা হবে।

চিকিত্সা পদার্থবিদ্যা অনুসারে বিকিরিত শক্তির সাহায্যে কোন বিকিরিত মাধ্যমকে সম্পৃক্তায়ন  এর মাত্রা পরিমাপের কোন উপায় নেই। বিশেষ করে ইথাইল এ্যালকোহলের ন্যায় একটি জৈব পদার্থের ক্ষেত্রে। কারণ এটি কোন জীবন্তু টিসু্র অনুরূপ নয়। এ জন্যই সৌরশক্তির দ্বারা ইথাইল এ্যালকোহলের সম্পৃক্তায়ন যাতে পরিপূর্ণ মাত্রায় পৌছে এবং এর ঔষধি কার্যকারীতা বৃদ্ধি পায় সে লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে হোমিও পদ্ধতিতে সুস্থ মানবদেহে এগুলোর পরীক্ষা চালানো হয়। বিকিরণ পরীক্ষার ৬ মাস পর যাদের উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছিল তাদের ডায়ারিয়া, বমনেচ্ছা, বমন, গলায় প্রদাহ, ক্ষুধাহীনতা, জ্বর, চুল পড়ে যাওয়া ইত্যাদি বিকিরণজনিত অসুস্থতা দেখা দিতে শুরু করে। হোমিওপ্যাথিক পরিভাষায় পরীক্ষাধীন সুস্থ লোকদিগকে বলা হয় প্রুভার। পরীক্ষাধীন লোকদের বিকিরণজনিত রোগব্যাধি হওয়ার পর এটাই বিবেচনা করা যায় যে তরল এ্যালকোহলীয় পদার্থটি ঔষধি গুণসম্পন্ন হয়েছে এবং তা সৌর অথবা অতিবেগুনী বিকিরণ জনিত বিষাক্ততা সম্পন্ন। এরপর এ থেকে যতসামান্য তরল এ্যালকোহল নমুনা হিসেবে বের করে এনে হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়া অনুসারে শক্তিকৃত করা হয়। এরপর তা রুগ্ন দেহে পরীক্ষিত হয়।পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, অনাক্রম্য বৈকল্য জনিত রোগ চিকিত্সাকল্পে হোমিও ওষুধ তৈরীর উদ্দেশ্যে একটি কাঁচের বোতলে ইথাইল এ্যালকোহলকে অনবরত সূর্যালোক পতিত হয় এমন স্থানে রেখে কমপক্ষে ৬ মাস ধরে বিকিরিত করা হয়। এরপর তা অনাক্রম্য বৈকল্যজনিত রোগীদের ব্যবহার উপযোগী হয়। একটানা ৭ বছর ধরে বিকিরণ প্রাপ্ত ইথাইল এ্যালকোহল ব্যবহার করে অত্যন্ত ভাল ফল পাওয়া গেছে।

১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত প্রতি ৬ মাস পর পর বিকিরিত এ্যালকোহল পরীক্ষা প্রক্রিয়া খুবই সুফলদায়ক ছিল। দেখা গেছে সুস্থ ব্যাক্তিদের দেহে এই এ্যালকোহল বিভিন্ন রোগলক্ষণ সৃষ্টি করেছে এবং দীর্ঘকালীন পুরানো ব্যাধিতে যারা ভুগছেন, এ ওষুধে তাদেরও রোগনিরাময় হয়েছে। হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়া মতে তৈরী শততমিক এবং পঞ্চাশ সহস্রতমিক এই উভয়বিধ শক্তির ওষুধ নিয়ে তুলনামূলক পরীক্ষা চালিয়ে পঞ্চাশ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া গেছে।

নারী ও পুরুষ উভয় ধরনের কয়েক হাজার রোগীকে এ ধরণের ওষুধ দ্বারা চিকিত্সার আওতায় আনা হয় এবং এদেরকে প্রায় ২৫ বছর ধরে (১৯৮০-২০০৫) পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

অনাক্রম্য বৈকল্যজনিত রোগব্যাধির নিরাময়ের জন্য একটি সফল হোমিও ওষুধ উদ্ভাবন করাই এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল না বরং মানুষকে রোগপ্রবণতা থেকে মুক্ত করাও এই ওষুধ তৈরীর লক্ষ্য ছিল। যে রোগপ্রবণতা প্রায় ৯৯% মানুষের মধ্যেই দেখা যায়।

যারা অনাক্রম্য বৈকল্যজনিত অসুখে ভুগছেন অথচ একটানা ওষুধ ব্যবহার করছেন না, তাদের রোগ নিরাময় করাও এ গবেষণার অন্যতম লক্ষ্য ছিল।

যারা অনাক্রম্য বৈকল্যজনিত রোগে ভুগছেন তাদেরকে শল্যচিকিত্সার ঝুঁকি থেকে বাঁচিয়ে সুলভে হোমিও চিকিত্সার সুযোগ প্রদানও এ গবেষণার একটি লক্ষ্য ছিল।

দেহের অনাক্রম্য পদ্ধতিকে প্রকৃতি প্রদত্ত ক্ষমতা পুনরায় লাভ করার ব্যাপারেও যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে এই হোমিও ওষুধ। ফলে এই অনাক্রম্য পদ্ধতি বহিরাগত শত্রুর সাথে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। যে শক্তি প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিপালিত প্রাণীর মধ্যে বিদ্যমান থাকে, যাহারা সৌররশ্মি থেকে প্রাপ্ত অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণের আওতায় বেড়ে উঠে । সৌরশক্তি বিহীন কৃত্রিম পরিবেশে পালিত প্রাণীদের মধ্যে এ ক্ষমতা থাকে না।

গবেষণার দ্বারা নতুনভাবে পরিক্ষিত এই হোমিও ওষুধ “সল” চিকিত্সার যেসব ক্ষেত্রে অবদান রাখবে :-

১. অনাক্রম্য স্বল্পতা , স্ব-অনাক্রম্যতা, অতিসংবেদনশীলতা, দেহকোষ ধবংসকারী প্রতিক্রিয়া, অনাক্রম্য জটিলতা ইত্যাদি অনাক্রম্য বৈকল্যজনিত রোগব্যাধি নিরাময়ের ক্ষেত্রে শক্তিশালী হোমিও ওষুধের অভাব মোচন করবে ।

২. উপশমকারক এবং অনাক্রম্য অবদমনকারী ওষুধের ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে আনবে। কারণ এসব ওষুধের ব্যবহার দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বা অনাক্রম্য পদ্ধতিতে অনাক্রম্য মিমাংসা অবস্থার সৃষ্টি হয়, ফলে দেহ শক্তিশালী অণুজীব যথা, এইচআইভি, হেপাটাইটিস ইত্যাদিকে আক্রমনে সহায়তা করে।

৩. এ্যালোপ্যাথিক পদ্ধতিতে প্রায়শই ইনজেকশনের মাধ্যমে দেহে ওষুধ প্রবিষ্ট করানো হয়। এতে বাঞ্চিত ফললাভে ব্যঘাত ঘটে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে শুধু মুখে ওষুধ খাওয়ার পদ্ধতি চালু করে এসব সমস্যা দুরীকরণ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত থাকা যাবে।

৪. ওষুধের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে অনাক্রম্য নিয়ন্ত্রণের  মাধ্যমে নিরোগ স্বাস্থ্য অর্জনের দীর্ঘদিনের আকাঙ্খীত লক্ষ্য অর্জনে প্রচলিত চিকিত্সা ব্যবস্থাকে সহায়তা করবে।

৫. আধুনিক উপশমকারক ওষুধ শুধু রোগলক্ষণ নিরাময় করে, রোগ নিরাময় করে না। হোমিওপ্যাথিক এবং অন্যান্য বিকল্প ওষুধকে শুধুমাত্র লক্ষন উপশমকারী এজেন্ট নয় বরং রোগ নিরাময়কারী এজেন্টে রূপান্তরিত করবে।

৬. প্রচলিত শল্যচিকিত্সা এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ন্যায় অত্যধিক ব্যয়বহুল চিকিত্সা পদ্ধতির বদলে স্বল্পব্যয়ী চিকিত্সা পদ্ধতির প্রবর্তন করবে।

৭. এ্যালোপ্যাথিক চিকিত্সা বিজ্ঞান এপেনডিক্স, টনসিল, চোখ, কিডনি, গলব্লাডার, স্তন, ডিম্বাশয়, জরায়ু, অন্ত্র ইত্যাদি প্রাকৃতিক অঙ্গসমুহকে রোগমুক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় এগুলোকে শল্যচিকিত্সার মাধ্যমে কেটে বাদ দিচ্ছে। এই চিকিত্সার মাধ্যমে এসব অঙ্গ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।

৮. অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর ওষুধের মাধ্যমে অনাক্রম্য অবদমন ঘটানো হয়। ফলে রোগীর দেহ সুবিধাবাদী রোগজীবাণুর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠে। এ পরিস্থিতির অবসান ঘটানো সম্ভব হচ্ছে ।

৯. জিন থেরাপীর ফলে কোষের জিনগত পরিবর্তন ঘটে এবং টিউমার গড়ে উঠার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। অতএব জীন চিকিত্সা এড়ানো সম্ভব হবে।

১০. রোগমুক্ত এবং ওষুধমুক্ত দীর্ঘজীবন লাভের মাধ্যমে সমাজের বয়স্ক শ্রেণীর লোকদের বুদ্ধিবৃত্তিকে মানবসেবায় কাজে লাগানো যাবে। জীন চিকিত্সার মাধ্যমে বদলে দেয়া (জেনেটিক্যালী মডিফাইড) উদ্ভিদের ন্যায় সুস্থ, রোগমুক্ত তরুন প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

১১. হিউম্যান লিস্ফোসাইট এন্টিজেন বা এইচ, এল, এ যথা, বি-২৭ ডিআর-৪ ইত্যাদির প্রভাবে স্ব-অনাক্রম্যতা এবং অন্যান্য অনাক্রম্য সংক্রান্ত রোগব্যাধি ঘটে। এসব রোগের প্রতি দেহের রোগপ্রবণতা হ্রাস করা যাবে।

এই ব্যয় সাশ্রয়ী হোমিওপ্যাথিক ইমিউনোমডুলেশন চিকিত্সা পদ্ধতি অনাক্রম্য বৈকল্যজনিত রোগব্যাধির চিকিত্সায় প্রচলিত সকল প্রাচীন ও আধুনিক চিকিত্সা ব্যবস্থার বাধাবিপত্তিকে দুরীভুত করবে এবং চিকিত্সা ক্ষেত্রে ব্যাপক অপচয় রোধেও সাহায্য করবে। তদুপরী সকল বয়সী লোকদের জন্য বাস্তবিকই একটি নিরোপ জীবন নিশ্চিত করবে। এমন একদিন আসবে যখন জীন প্রযুক্তি ব্যতীত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার দ্বারা বিষমুক্ত তথা রোগমুক্ত হয়ে মানুষ পুরোপুরি সু্স্থ ও দীর্ঘায়িত জীবন লাভ করতে সক্ষম হবে।

5 comments on “আমাদের প্রকাশনা

  1. Thanks Mr. Rashid for your nice, informative and scitific writing on homemodulation and human immunology. You should write more and more on news paper and publish your books. People can know the difference between traditional treatment and homeo treatment with immunolgy. And i think somehow you should take proper initiative to retain and nourishment your research on immunoology.

  2. Hi Mr.Rashid,
    I am very amazed by your knowledge and thoughts. I think the homeopathic world could be much more enriched and benefited by your thoughts and research works.I am very curious about you and your works. I am studying homeopathy and also a fanatic.I wonder, why I didn,t know you before?I read all of your message and tried to understand.I cann,t wait to meet you in Bangladesh if you let me!

  3. Hi Mr Rashid.
    Thanks a lot for your replay.
    I think it,s better to call you and talk with you about me. I have already started to spred your message to my teacher and classmates without your permission. The swedish people are very careful and a bit cautious about everything. They usually take time to understand everything. I think it,s good. I will call you tomorrow. Jesmin

homeomodulation এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল