ইমিউনোলজি বিজ্ঞানের ভিত্তিতে পরিচালিত গবেষণা এবং তার ফলাফল

(ক) চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার এ্যাডজুভ্যান্ট বা উদ্দীপক দ্বারা ইমিউনোমডুলেশন বা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সাহায্যে অসংক্রামক রোগের নিরাময় সাধন ।
(খ) এ্যাডজুভ্যান্ট বা উদ্দীপক এর শ্রেনীবিভাগ ।
(গ) এ্যাডজুভ্যান্ট বা উদ্দীপক দ্বারা ইমিউনোমডুলেশন বা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে রোগ চিকিৎসার পথের বাধাসমূহ।

ইমিউনোলজি বিজ্ঞানের ভিত্তিতে অসংক্রামক রোগ চিকিৎসার উপায় অন্বেষণে পরিচালিত গবেষণা এবং তার ফলাফলঃ

নন-ইনফেকশাস বা অসংক্রামক রোগের বেলায় প্রচলিত আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে রোগকষ্ট উপশম করার জন্য জ্বরনাশক, বেদনানাশক, পাতলা পায়খানা রোধক, উচ্চ রক্তচাপ নিবারক, কোষ্ঠ পরিস্কারক, মূত্রকারক ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করা। এর চাইতে অধিকতর শক্তিশালী ওষুধ এ্যান্টিহিস্টামাইন বা হিষ্টামাইন বিরোধী এবং স্টেরয়েড বা হরমন জাতীয় ওষুধ। এসব ওষুধ ব্যবহার করলে রোগকষ্ট কমে যায় কিন্তু দেহ বিষমুক্ত হয়ে রোগমুক্ত হয় না বরং রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমশঃ দূর্বল হতে থাকে। এরকম চিকিৎসার নাম ইমিউনোসাপ্রেশন বা ‘রোগপ্রতিরোধ শক্তির অবদমন’।

এমনিভাবে রোগপ্রতিরোধ শক্তিকে অবদমনের দ্বারা রোগকষ্ট কমিয়ে রাখার পরিণতি হচ্ছে দেহকে বিষাক্ত পদার্থের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত করা। ইতিপূর্বে বর্ণিত ইমিউনোলজি বিজ্ঞানের মতে চার প্রকার রোগের পিছনে রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর বিশৃঙ্খলা দায়ী এবং এই বিশৃঙ্খলার জন্য মূলতঃ দায়ী হচ্ছে দেহে প্রবিষ্ট রোগবিষ সমুহকে কোন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ধ্বংস করার বিষয়ে দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর অক্ষমতা । বহিরাগত রোগবিষসমুহকে দেহকোষের কাছে পৌঁছার আগেই যদি রক্তপ্রবাহের মাঝে থাকতেই ধবংস করা সম্ভব হতো তাহলে দেহকোষের ক্ষতি সাধিত হতো না । এর জন্য প্রয়োজন সুস্থ ও সুদক্ষ শ্বেতকণিকার, যারা অহেতুক বিলম্বিত লড়াইয়ের দ্বারা সুস্থ দেহের স্বাভাবিক কর্মকান্ডের ভিতর বিশৃঙ্খলাজনিত রোগলক্ষণ সৃষ্টি না করে কেবলমাত্র ক্ষতিকর জীবিত বা মৃত রোগবিষ সমুহকে ধবংস করে ফেলতে পারে। যেমনটি করছে একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ বাহিনী। রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর দূর্বলতার সুযোগে দেহে জন্ম নিচ্ছে অজ্ঞাত পরিচয় রোগবিষের আধিক্য। আর এই সুযোগকে বাড়িয়ে দিচ্ছে রোগবিষসমূহকে সনাক্ত করে ধবংস করার কাজে রোগপ্রতিরোধ বাহিনীকে সাহায্য করতে না পারা। একথাটা বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেও ঐ সব রোগবিষসমূহকে তারা সনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছেন না এবং দেহকোষের ক্ষতিসাধন না করে বাছাই করে শুধুমাত্র রোগবিষ সমুহকে ধবংস করার মত ক্ষমতাসম্পন্ন কোন ওষুধ আবিষ্কার করতে পারছেন না। এ সকল অজ্ঞাত পরিচয় রোগবিষকে সনাক্ত করে ধ্বংস করতে না পেরে শুধুমাত্র প্যালিয়েটিভ বা রোগকষ্ট উপশমকারী যে চিকিৎসা দীর্ঘদিন যাবৎ পৃথিবীতে প্রচলিত রয়েছে তার দ্বারা দেহের আভ্যন্তরীণ পরিবেশ অধিকতর রোগবিষের আবাসভূমিতে পরিণত হচ্ছে, যা উপরোক্ত বিশৃঙ্খলাকে ক্রমাগত বাড়িয়েই চলেছে, এ কথাটা বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেও এর কোন প্রতিকার করতে পারছেন না।
অসংক্রামক রোগের মধ্যে ক্যান্সার রোগকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অসংক্রামক রোগের রোগবিষকে সনাক্ত করা সম্ভব না হলেও কেবলমাত্র কতিপয় ক্যান্সার রোগের বেলায় ক্যান্সার কোষের মধ্য থেকে নেওয়া রস থেকে এক ধরনের ক্যান্সার জাতীয় রোগবিষকে পৃথক করা সম্ভব হয়েছে। ক্যান্সার রোগীর দেহ থেকে সংগৃহীত রোগবিষকে একই রোগীর দেহে ইনজেকশনের দ্বারা প্রয়োগ করে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে রোধ করার চেষ্টাও আংশিক ভাবে সফল হয়েছে। এটা অনেকটা ক্যান্সার রোগের টিকার মত কাজ করছে বলে ধরে নেওয়া যায়। এর দ্বারা অপারেশন করে ক্যান্সারের টিউমার অপসারণ করার পর ক্যান্সারের বৃদ্ধিকে আংশিকভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হলেও ক্যান্সার আরোগ্য করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ বিজ্ঞানীরা বিসিজি নামক যক্ষ্মা রোগের টিকাতে ব্যবহৃত মৃতপ্রায় যক্ষ্মারোগের জীবাণুকে ত্বকের, রক্তের, স্তনের এবং ফুসফুসের ক্যান্সার রোগীর দেহে ইনজেকশনের দ্বারা প্রয়োগ করে ক্যান্সার আরোগ্য করতে আংশিকভাবে সফল হয়েছেন।
(ক) চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার এ্যাডজুভ্যান্ট বা উত্তেজক দ্বারা ইমিউনোমডুলেশন বা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সাহায্যে অসংক্রামক রোগের নিরাময় সাধন ঃ- মূলতঃ কলেরা, বসন্ত, হাম, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগের টিকাতে ব্যবহৃত জীবাণু বা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগবিষ ব্যবহার করে রোগ প্রতিহত করা কিংবা ক্যান্সার রোগবিষ বা বিসিজি টীকার দ্বারা ক্যান্সার প্রতিরোধ করা, এ দুটো প্রক্রিয়াই সংঘটিত হচ্ছে যে পদ্ধতিতে তার নাম ইমিউনোমডুুলেশন বা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ। যে সকল বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে কাজটি করা হয় তাদের নাম এ্যাডজুভ্যান্ট বা উদ্দীপক । ১৯৪২ সালে আমেরিকার অণুজীব বিজ্ঞানী জুলস টি, ফ্রয়েন্ড প্রক্রিয়াটি আবিষ্কার করেন। দেহের মাঝে বিদ্যমান নয় এমন কিছু ফরেন টক্সিক বা বিজাতীয় বিষাক্ত পদার্থকে দেহের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিলে রোগপ্রতিরোধ বাহিনী উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং দেহে প্রবিষ্ট নতুন বিষাক্ত পদার্থসমূহকে ধ্বংস করতে গিয়ে দেহের মধ্যে বিদ্যমান অনুরূপ সকল পুরাতন রোগবিষকেও ধ্বংস করে ফেলে। ফলে রোগীর দেহের অনেক ধরনের রোগকষ্ট দূরীভূত হয়ে যায়।
(খ) এ্যাডজুভ্যান্ট বা উত্তেজক এর শ্রেণীবিভাগ ঃ- সংক্রামক রোগসমূহের রোগবিষ দেহে প্রবেশ করে বেশিদিন লুকিয়ে থাকতে পারে না। হয় রোগপ্রতিরোধ বাহিনী শীঘ্রই তাদেরকে সনাক্ত করে ধ্বংস করে ফেলে, নয়তো রোগবিষ দ্বারা রোগীর মৃত্যু ঘটে। কিন্তু অসংক্রামক রোগের বেলায় রোগবিষসমূহ দীর্ঘদিন দেহের ভেতর লুকিয়ে থাকে এবং দেহকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্থ করতে থাকে। তাদেরকে দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনী যে কেন সনাক্ত করে ধ্বংস করে না তার একটা সম্ভাব্য কারণ বিজ্ঞানীরা চিন্তা করে বের করেছেন। রোগবিষসমূহের প্রতি এইচ,এল,এ’র প্রভাবে সৃষ্ট দেহের ইমিউন টলারেন্স বা রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর সহনশীলতাকে এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এহেন সহনশীলতাকে ভেঙ্গে দিতে পারে যে সকল পদার্থ তারাই হচ্ছে এ্যাডজুভ্যান্ট বা উদ্দীপক। উদ্দীপক দু’ধরনের হতে পারে, যথা- স্পেসিফিক বা সুনির্দিষ্ট উদ্দীপক এবং নন-স্পেসিফিক বা অনির্দিষ্ট উদ্দীপক। দেহের মধ্যে রোগ সৃষ্টি করছে যে রোগবিষ তার অবিকল অনুরূপ বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা তৈরী উত্তেজক হচ্ছে সুনির্দিষ্ট উদ্দীপক। যেমন, য²া রোগের মৃত জীবাণু দ্বারা তৈরী টিকার দ্বারা যখন যক্ষ্মা রোগকে প্রতিরোধ করা হয়, সেই টিকাকে আমরা বলব সুনির্দিষ্ট উদ্দীপক। এমনিভাবে সংক্রামক ব্যাধির বেলায় রোগজীবাণুর মৃতদেহ দ্বারা তৈরি টীকাসমূহ এবং ক্যান্সার কোষ হতে সংগৃহীত বিষাক্ত রোগবিষ দ্বারা তৈরি উদ্দীপকসমূহ হচ্ছে স্পেসিফিক বা সুনির্দিষ্ট উদ্দীপক। কিন্তু যক্ষ্মা রোগজীবাণুর মৃতদেহ দিয়ে তৈরি বিসিজি টিকার বিষকে যদি ক্যান্সার আরোগ্যের কাজে উদ্দীপক হিসাবে ব্যবহার করা হয় তাহলে সে ধরনের উদ্দীপককে নন-স্পেসিফিক বা অনির্দিষ্ট উদ্দীপক বলা হবে।
(গ) এ্যাডজুভ্যান্ট বা উদ্দীপক দ্বারা ইমিউনোমডুলেশন বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে রোগ চিকিৎসার পথের বাধাসমূহ ঃ মানবদেহের রোগ সৃষ্টিকারক যে সকল রোগবিষসমূহকে সনাক্ত করে দেহের বাইরে কালচার বা চাষ করা গিয়েছে, সে সকল রোগকে প্রতিরোধ বা প্রতিকার করার উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট উদ্দীপক তৈরি করা গিয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডায়ারিয়া, সিফিলিস, গণোরিয়া ইত্যাদি রোগের ভাইরাস এবং জীবাণুকে মানবদেহের বাইরে চাষ করা সম্ভব হয়নি বলে তাদের টিকা তৈরি করাও সম্ভব হয়নি। সমস্যা থেকে গিয়েছে সেই সকল রোগের বেলায় যাদের রোগবিষকে সনাক্ত করা যায়নি। যে সকল রোগবিষসমূহকে সনাক্ত করা যায়নি তাদের অবিকল অনুরূপ উদ্দীপক নির্ধারণ করাও সম্ভব হয়নি। আধুনিক ইমিউনোলজি বিজ্ঞানের অগ্রগতি এই একটি কারণে প্রধানতঃ বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।
অসংক্রামক রোগের সৃষ্টির পিছনে দায়ী হচ্ছে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা। আর সেই বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী হচ্ছে দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর দূর্বলতা, যে দূর্বলতার কারণে রোগপ্রতিরোধ বাহিনী রোগবিষসমুহকে সনাক্ত করে দেহের প্রবেশ দ্বারসমুহ দিয়ে প্রবেশমাত্রই ধবংস করতে পারছে না, যেমনটি পারছে একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনী । যার ফলে রোগবিষেরা দেহের গভীরে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে যেখানে দূর্বল রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর সঙ্গে রোগবিষের দীর্ঘমেয়াদী লড়াই দেহকোষসমুহকে কখনোও উত্তেজিত, কখনোও ধবংসপ্রাপ্ত আবার কখনোও ক্ষতিগ্রস্ত করে সৃষ্টি করছে সব জটিল রোগ যা আমরা পূর্বেই বলেছি। এরূপ অজ্ঞাত পরিচয় রোগবিষকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ইমিউনোমডুলেশন বা রোগপ্রতিরোধ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে বিজ্ঞানীরা কখনো প্রয়োগ করার চেষ্টা করেননি বা করলেও ব্যর্থ হয়েছেন । বিজ্ঞানীরা নন-ইনফেকশাস বা অসংক্রামক রোগসমুহের মধ্যে কেবলমাত্র ক্যান্সার রোগের সমাধান খুঁজতে গিয়ে কতিপয় ক্যান্সারের রোগবিষকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই ক্যান্সারের রোগবিষ দিয়ে কিংবা বিসিজি টিকার সাহায্যে ইমিউনোমডুলেশন বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। এতে আংশিক সাফল্যও অর্জিত হয়েছে। এরূপ সাফল্য আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে ক্যান্সার ছাড়া অন্যান্য অসংক্রামক রোগের আরোগ্যের উদ্দেশ্যে উদ্দীপিতকরণ প্রক্রিয়াকে প্রয়োগ করার কথা ভাবতে। এ পথে একমাত্র বাধা হচ্ছে, প্রচলিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দেহস্থ রোগবিষসমূহকে সনাক্ত করতে না পারা। অতীতে বিজ্ঞান বার বার এ ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছে। পদার্থ বিদ্যার প্রধান শক্তিগুলো হচ্ছে তাপ, আলো, শব্দ, বিদ্যুৎ এবং চুম্বক শক্তি। এদের কোনটিকেই চোখে দেখা সম্ভব হয়নি। অথচ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানীরা ইনডিরেক্ট মেথড বা পরোক্ষ পদ্ধতির সাহায্যে এ সকল ইমপন্ডারেবল বা অপরিমেয় (যা মাপা যায় না এমন) শক্তিকে পরিমাপ এবং নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বের করেছেন। রোগবিষকে চোখে দেখা যাচ্ছে না, এমনকি অনূবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও না। অথচ এরা রোগ উৎপাদন করে চলেছে। আমাদের প্রচেষ্টা হবে রোগবিষকে সনাক্ত করার কোন বিকল্প পদ্ধতি খুঁজে বের করা। এই প্রচেষ্টায় আমরা নিজস্ব কোন গবেষণালব্ধ পদ্ধতি নয়, বরং প্রচলিত প্রাচীন ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতির প্রক্রিয়াসমূহকে আধুনিক ইমিউনোলজি বিজ্ঞানের গবেষণালব্ধ তথ্যের আলোকে বিশে¬ষণ করে এদের গ্রহণযোগ্যতাকে যাচাই করে দেখে ব্যবহার করার জন্য সুপারিশ করব।

অসংক্রামক রোগের প্রচলিত চিকিৎসা এবং উপরোক্ত সমস্যার একটি সম্ভাব্য সমাধান


বর্তমানে প্রচলিত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার বিশৃঙ্খলা যথা- (ক) ইমিউন রিএ্যাকশন ডিজিজ, (খ) অটোইমিউন ডিজিজ এবং (গ) ইমিউনোডিফিশিয়েন্সি ডিজিজ জনিত রোগসমূহের চিকিৎসা হচ্ছে শুধুমাত্র রোগকষ্ট দূর করার উপযোগী জ্বরনাশক, বেদনানাশক, প্রদাহ নিবারক, হিস্টামাইন বিরোধী, চ্যানেল ব্লকার, রক্তনালী প্রসারক এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অবদমনকারী ওষুধ যথা- স্টেরয়েড ইত্যাদি সেবন করা। এর বিকল্প হচ্ছে প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক ভেষজ, রোগজ, প্রাণীজ, জীবাণূজ এবং নানাবিধ রাসায়নিক পদার্থসমূহের স্থূল এবং সূক্ষ্ম মাত্রায় ইনজেকশনের পরিবর্তে মুখে খাইয়ে ব্যবহার করা। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ইমিউনোলজি বিজ্ঞানী ড. জুলস্ টি ফ্রয়েন্ড কর্তৃক ১৯৪২ সালে আবিষ্কৃত এ্যাডজুভ্যান্ট বা উদ্দীপক দ্বারা পরিচালিত চিকিৎসার সঙ্গে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায়, যার ক্রিয়া পদ্ধতি দেহকে বিষমুক্ত করে রোগমুক্তকরণ। এই পদ্ধতিসমূহের দ্বারা পরিচালিত চিকিৎসার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ বা ইমিউনোমডুলেশন দ্বারা দেহকে বিষমুক্ত করে রোগমুক্ত করা। বিষয়টি বিতর্কিত হলেও মানবদেহে পরিচালিত পরীক্ষার দ্বারা এটা নিশ্চিত যে, প্রাকৃতিক চিকিৎসা কোনক্রমেই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে অবদমন করে না এবং নিঃসন্দেহে এর ব্যবহার মানুষের রোগ প্রবনতাকে কমিয়ে ওষুধ নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করে থাকে। কৃত্রিমভাবে তৈরী সাইটোকাইন জাতীয় উপাদানের ব্যবহারজনিত যে জটিলতা বিজ্ঞানীদিগকে অধিকতর ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ অস্থিমজ্জার সংস্থাপন অথবা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তার হাত থেকে মুক্ত রাখার জন্য আপাততঃ হোমিওপ্যাথিক ইমিউনোমডুলেশন প্রক্রিয়া শ্রেয়ঃ।

এ্যাডজুভ্যান্ট বা উদ্দীপক এর শ্রেণীভেদ অনুযায়ী ব্যবহার বিধি এবং মানবজাতির ক্ষেত্রে মৌখিক প্রয়োগের ব্যবহার

homeopathy

ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগযোগ্য এ্যাডজুভ্যান্ট বা উদ্দীপক দ্বারা চিকিৎসাকে সুনির্দিষ্ট এবং অনির্দিষ্ট এই দু’ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা, বি সি জি দ্বারা যক্ষ্মা রোগকে, বসন্তের টিকা দ্বারা বসন্ত রোগকে এবং হামের টিকা দ্বারা হাম রোগকে প্রতিরোধ করা হয়। এধরনের ব্যবহারকে উদ্দীপকের সুনির্দিষ্ট ব্যবহার বলা যায়, যা কেবলমাত্র রোগপ্রতিরোধক, রোগ আরোগ্যকারী নয়। কিন্তু ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে যখন বি সি জি টিকা অথবা সাইটোকাইন জাতীয় উপাদান ব্যবহার করা হয় তখন তাকে উদ্দীপকের অনির্দিষ্ট ব্যবহার বলা হয়। টিকার এধরনের অনির্দিষ্ট ব্যবহার রোগপ্রতিরোধক নয় বরং রোগ আরোগ্যকর। মানবজাতির ক্ষেত্রে টিকায় ব্যবহৃত জীবাণূর মৃতদেহকে অন্যান্য ভেষজ এবং রাসায়নিক উপাদানের পাশাপাশি মুখে খাইয়ে ব্যবহারের যে প্রক্রিয়া হোমিওপ্যাথি শাস্ত্রে দীর্ঘদিন যাবত প্রচলিত রয়েছে তা মূলতঃ আরোগ্যকর এবং ইনজেকশনের দ্বারা প্রয়োগের কারণে ব্যর্থ বলে পরিত্যক্ত ফ্রয়েন্ডের পদ্ধতির একটি অত্যন্ত সফল বিকল্প বাস্তবায়ন হিসাবে পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান