রোগপ্রতিরোধ শক্তি বর্ধনের চারটি উপায়ের পর্যায়ক্রমিক প্রয়োগ

ইমিউনোলজি জ্ঞানের দ্বারা আমরা জানতে পারি যে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করে থাকে। প্রথমত মেডুলার বা মজ্জার দ্বারা, দ্বিতীয়তঃ সেলুলার বা শ্বেতকণিকার দ্বারা, তৃতীয়তঃ হিউমোরাল বা এ্যান্টিবডি এবং কমপি¬মেন্টের দ্বারা এবং চতুর্থ ক্ষেত্রটি হচ্ছে নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর বা কোষের পুষ্টি সাধনের দ্বারা যা ইমিউনোলজিক্যাল ফ্যাক্টর বহির্র্ভূত। যে সকল টক্সিক বা বিষাক্ত উপাদান মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ শক্তিকে বেশী মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ এবং অল্প মাত্রায় শক্তিশালী করে তুলতে পারে সেগুলোকে আমরা চার ভাগে বিভক্ত করতে পারি।
(ক) উদ্ভিজ্জ, খনিজ, রাসায়নিক ও প্রাণীজ উপাদান
(খ) জীবাণুজ উপাদান (ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোটক্সিন)
(গ) তেজষ্ক্রিয় (রেডিও এ্যাকটিভ) উপাদান
(ঘ) হোমিওপ্যাথিতে সংযোজিত কতিপয় নতুন ওষুধ
(ঙ) পুষ্টিকারক ১২টি লবন জাতীয় জৈব রাসায়নিক (বায়োকেমিক্যাল) উপাদান

এই চার প্রকার উপাদান প্রায় দীর্ঘ দেড় শতাব্দী যাবৎ পৃথক পৃথকভাবে রোগ চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অর্থাৎ এগুলো কোন নতুন উদ্ভাবিত ওষুধ নয়। শুধুমাত্র ইমিউনোলজি বিজ্ঞানের আদর্শে ওষুধগুলোকে পর্যায়ক্রমিকভাবে ব্যবহার করে আমরা জটিল রোগীদের বেলায় সার্বদৈহিক ক্ষেত্রে উপকার হতে দেখেছি। বিগত ৩০ বৎসর যাবৎ রোগীদের উপর প্রয়োগের দ্বারা আমরা উপরোক্ত প্রক্রিয়ার কার্যকারীতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে পেরেছি। আয়ুর্বেদ ও ইউনানী পদ্ধতিতে উদ্ভিজ্জ, খনিজ, প্রাণীজ ও রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু জীবাণুজ এবং তেজষ্ক্রিয় উপাদানের ব্যবহার নেই। হোমিওপ্যাথিতে জীবাণুজ ও তেজষ্ক্রিয় উপাদানের ব্যবহার বিগত এক শতাব্দী যাবৎ সমগ্র বিশ্বের দেশগুলিতে প্রচলিত রয়েছে। তাই এই হোমিওপ্যাথিক ইমিউনোমডুলেশন ফর্মূলায় আয়ুর্বেদ, ইউনানী, হোমিওপ্যাথি, বায়োকেমিক এবং ডাঃ বার্নেটের প্রবর্তিত অর্গানোথেরাপিতে ব্যবহৃত চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহের উপাদান সমূহকে পর্যায়ক্রমিকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। বিগত কয়েক শতাব্দীতে প্রচলিত বিশ্বের সব চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাল দিকগুলোকে বিচার বিবেচনা করে বেছে নিয়ে ফ্রান্সের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাঃ ও এ জুলিয়ান কর্তৃক হোমিওপ্যাথি ও ইমিউনোলজির সমন্বয়ে গঠিত ‘ডাইনামাইজড মাইক্রো-ইমিউনোথেরাপি’ ফর্মূলার উপর ভিত্তি করে উন্নততর একটি চিকিৎসা পদ্ধতির প্রণয়ন করা হয়েছে। অধিকন্তু দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর কার্যকর কতিপয় নতুনভাবে সংযোজিত ওষুধের ব্যবহারের দ্বারা দূরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসায় নতুন মাত্রার সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব ওষুধের ভিতর (১) কর্টিসন, (২) ডিএনএ, (৩) আরএনএ, (৪) ইন্টারফেরন, (৫) ইন্টারলিউকিন নামক কয়েকটি ওষুধ নিয়ে বিদেশে গবেষণা চলছে। এসব ওষুধ ১৩নং অণুচ্ছেদে বর্ণিত লঘুমাত্রায় মৌখিক প্রয়োগের দ্বারা এদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অবদমনকারী ক্রিয়াকে শক্তিবৃদ্ধিকরণ গুণসম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। অধিকমাত্রায় ইনজেকশনের দ্বারা প্রয়োগ করার ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অবদমিত বা সাপ্রেস্ড হওয়ার কারণে চিকিৎসা বিজ্ঞান যে উপকার অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেই মারাত্মক ক্ষতির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার মত এক যুগান্তকারী প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটেছে শুধুমাত্র লঘুকরণ প্রক্রিয়ার দ্বারা। ইমিউনোলজি বিজ্ঞানী ডাঃ ওয়ারেন লেভিনসন এমডি, পিএইচডি কর্তৃক প্রণীত ‘মেডিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইমিউনোলজি’ নামক পুস্তকের ৫৮নং অণুচ্ছেদে যার বর্ণনা লিপিবদ্ধ রয়েছে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান